1 আলেফ হায়, কেমন একাকিনী হয়ে বসে আছে সেই নগরী, যা একসময়ে লোকে পরিপূর্ণা ছিল ! সর্বজাতির মধ্যে যে ছিল প্রধানা, সে হয়েছে বিধবার মত। একসময়ে প্রদেশগুলোর মধ্যে যে ছিল ঠাকুরানী, সে এখন করের অধীনা।
2 সে কাদে সারারাত ধরে, তার গাল বেয়ে অঝোরে পড়ে অশ্রুজল ; তার সকল প্রেমিকের মধ্যে তাকে সান্ত্বনা দেবে এমন কেউ নেই; তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তার সকল সখা, তারা সকলেই এখন তার শত্রু।
3 দুঃখ ও তীব্র শ্রমের পরে যদা গিয়েছে নির্বাসন-দেশে ; জাতিসকলের মাঝেই এখন তার বাস, সে কোথাও পাচ্ছে না একটা বিশ্রামস্থান ; তার সমস্ত সঙ্কটের মাঝে তার নাগাল পেয়েছে তার সকল উৎপীড়ক।
4 সিয়োনের দিকে যত পথ শোক পালন করছে, তার পর্বোৎসবে আর কেউ আসে না: শূন্যই তার সকল নগরদ্বার, দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার যাজক-সমাজ ; তার কুমারীরা দুঃখক্লিষ্ট, সে নিজেই করছে তিন্তু কষ্টভোগ।
5 তার বিরোধীরাই এখন তার মাথা, তার শত্রুসকল সমৃদ্ধি ভোগ করছে, কারণ তার অসংখ্য অধর্মের জন্য তাকে ক্লিষ্ট করেছেন প্রভু; শত্রুদের দ্বারা তাড়িত হয়ে তার বালকেরা বন্দিদশায় গেল।
6 আর সিয়োন কন্যার যে সমস্ত শোভা, এখন তার হয়েছে অন্তর্ধান। তার নেতাসকল হয়েছে এমন হরিণের মত যেগুলো পায় না কোন চারণমাঠ ; তাদের বিতাড়কদের আগে আগে তারা শক্তিহীন হয়ে যায়, পালিয়ে যায়।
7 যেরুসালেমের এখন মনে পড়ে তার দুঃখ ও দুর্গতির সেই সকল দিন, —তার প্রাচীনকালের সমস্ত ঐশ্বর্য-ধন— যে দিনে তার নিবাসীসকল মারা পড়ছিল শত্রুর হাতে, আর তার সাহায্য করার মত কেউই ছিল না। তার শত্রুরা তখন তার দিকে তাকাত, তার সর্বনাশে করত উপহাস।
8 যেরুসালেম এমন গুরু পাপ করেছে যে, সে হয়েছে যেন অশুচি বস্তুর মত; যারা তাকে সম্মান করত, তারা এখন তাকে তুচ্ছ করে, তারা যে তার উলঙ্গতা দেখতে পায়! সে নিজেও দীর্ঘশ্বাস ফেলে, পিছন ফিরে পড়ে যায়।
9 তার মলিনতা রয়েছে তার বস্ত্রের প্রান্তভাগে, মনে করছিল না সে এমনটি হবে তার নিজের পরিণাম ; আর এইজন্য আশ্চর্য হয়েছে তার পতন, তাকে সান্ত্বনা দেবে এখন কেউ নেই। ‘আমার দুঃখের দিকে চেয়ে দেখ, প্রভু, আমার শত্রু আমার উপর যে করছে জয়োল্লাস।'
10 তার সমস্ত মনোহর বস্তুর উপর বিরোধী বাড়াচ্ছে তার আপন হাত ; হ্যাঁ, সে দেখতে পাচ্ছে সেই বিজাতীয় সকলকে তার আপন পবিত্রধামে প্রবেশ করতে, যাদের তুমি নিষেধ করেছিলে তোমার জনসমাবেশে প্রবেশ করতে।
11 তার সমস্ত জনগণ দীর্ঘশ্বাস ফেলছে, অন্নের অন্বেষণ করছে; খাদ্যের বিনিময়ে নিজ নিজ মনোহর যত বস্তু দিচ্ছে, যাতে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে তাদের আপন প্রাণ ; ‘চেয়ে দেখ গো প্রভু ; ভেবে দেখ আমি কেমন অবজ্ঞার পাত্র।
12 তোমরা সকলে, যারা এই পথ দিয়ে চল, ভেবে দেখ, চেয়ে দেখ তোমরা, এমন দুঃখ আছে কিনা, যা আমার এই দুঃখের মত, এই যে দুঃখ দেওয়া হয়েছে আমায়, এই যে দুঃখদণ্ডে প্রভু আমায় দণ্ডিত করলেন তাঁর জ্বলন্ত ক্রোধের দিনে।
13 ঊর্ধ্ব থেকে তিনি আমার হাড়ের মধ্যে আগুন প্রেরণ করেছেন, সেই আগুনই এখন আমার সর্বাঙ্গে প্রভুত্ব করে ; আমার পায়ের সামনে তিনি পেতেছেন জাল, পিছন ফিরে পড়ালেন আমায় ; আমাকে উৎসন্ন করেছেন, করেছেন সারাদিন ধরে নিস্তেজ।
14 ভারী হয়েছে আমার শঠতার জোয়াল, তাঁরই হাতে জড়ানো হল সেই শঠতা সকল ; সেগুলোর জোয়াল আমার ঘাড়ে উঠল, খর্ব করল আমার বল ; প্রভু আমাকে তুলে দিয়েছেন সেগুলোর হাতে, আমি আর উঠতে পারছি না।
15 আমার মাঝে আমার যে সকল বীর, তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রভু। আমার যুবকদের চূর্ণ করার জন্য তিনি আমার বিরুদ্ধে আহ্বান করেছেন এক সৈন্যদল ; প্রভু যুদা-কুমারী কন্যাকে আঙুরমাড়াইকুণ্ডে মাড়াই করলেন।
16 এ কারণেই আমি কাঁদছি, আমার চোখ হয়েছে অশ্রুজলের নির্ঝর, আমার কাছ থেকে যে দূরেই রয়েছেন তিনি, যিনি সান্ত্বনা দেন, যিনি আমার প্রাণ সঞ্জীবিত করতে পারেন। আমার বালকেরা এতিম, কারণ শত্রু হয়েছে বিজয়ী।'
17 সিয়োন বাড়াচ্ছে হাত, কিন্তু তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত কেউ নেই। প্রভু যাকোবের সম্বন্ধে এই আজ্ঞা জারি করেছেন, তার চারদিকের লোক তার শত্রু হোক ; যেরুসালেম হয়েছে তাদের মধ্যে অশুচি বস্তুই যেন।
18 প্রভু ধর্মময়, আমিই যে হয়েছি তাঁর বাণীর প্রতি বিদ্রোহিণী ! শোন, হে জাতিসকল আমার দুঃখের দিকে চেয়ে দেখ ! আমার কুমারী ও যুবাসকল বন্দিদশায় গেছে!
19 আমি আমার প্রেমিকদের ডাকলাম, কিন্তু আমার প্রতি তারা বিশ্বাসঘাতকতা করল; আমার যাজক, আমার প্রবীণসকল নগরীর মধ্যে প্রাণত্যাগ করল, তারা অন্নের অন্বেষায় ছিল, যাতে বাঁচাতে পারে প্রাণ।
20 দেখ, প্রভু, কেমন সঙ্কট আমার ! আমার অন্ধ্ররাজি আলোড়িত, বুকে হৃদয় কম্পান্বিত, আমি যে সত্যিই হয়েছি বিদ্রোহিণী! বাইরে খড়্গা আমায় নিঃসন্তান করছে, ভিতরে মৃত্যুই যেন উপস্থিত !
21 শোন আমার কেমন দীর্ঘশ্বাস, অথচ আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত কেউ নেই। আমার শত্রুরা সকলে জানতে পেরেছে আমার দুর্দশার কথা, তারা মেতে উঠছে, কেননা তুমিই ঘটিয়েছ এসব কিছু। পাঠাও সেই দিনটি, যা তুমি নিরূপণ করেছ, যাতে তারাও আমার মত হয়!
22 তাদের সমস্ত অপকর্ম তোমার দৃষ্টিগোচর হোক, তাদের প্রতি সেইভাবে ব্যবহার কর, যেভাবে ব্যবহার করছ আমার প্রতি আমার সমস্ত অপরাধের জন্য। কেননা আমার দীর্ঘশ্বাস অগণন, আর আমার হৃদয় মূর্ছাতুর।