1 বাবিলন-রাজ বেশাজারের প্রথম বর্ষে দানিয়েল শয্যায় শুয়ে থাকাকালে একটা স্বপ্ন দেখলেন, ও তাঁর মনে নানা দর্শনও দেখা দিল। তিনি সেই স্বপ্নের একটা বিবরণী লিখলেন: বিবরণীতে দানিয়েল বলেন :
2 আমি রাত্রিবেলায় একটা দর্শনে দেখছিলাম, এমন সময় আকাশের চারবায়ু প্রচণ্ড বেগে মহাসমুদ্রের উপরে বইতে লাগল,
3 আর বিশাল চারটে পশু সমুদ্র থেকে বেরিয়ে উঠতে লাগল—সেগুলোর প্রত্যেকের চেহারা আলাদা ছিল :
4 প্রথমটা ছিল সিংহের মত, তার ডানাও ছিল, ঈগল পাখির ডানার মত। আমি দেখতে দেখতে তার সেই দুই ডানা কেড়ে নেওয়া হল, এবং মাটি থেকে উচ্চতে তোলা হলে তাকে মানুষের মত দুই পায়ে দাঁড় করানো হল ও মানব হৃদয় তাকে দেওয়া হল।
5 পরে দেখ, ভালুকের মত দ্বিতীয় একটা পশু : তা এক পাশে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াচ্ছিল, এবং তার মুখে, তার দাঁতেই, তিনটে পাঁজরের হাড় ছিল ; তাকে বলা হল : ওঠ, প্রচুর মাংস গ্রাস কর।
6 এর পরে আমি তাকিয়ে আছি, এমন সময় চিতাবাঘের মত আর একটা পশু উপস্থিত: তার পিঠে পাখির ডানার মত চারটে ডানা ছিল; তার চারটে মাথাও ছিল; একে কর্তৃত্ব দেওয়া হল।
7 আমি রাত্রিবেলায় আবার দর্শনে দেখছিলাম, এমন সময় ভয়ঙ্কর, সন্ত্রাসজনক ও খুবই শক্তিশালী চতুর্থ একটা পশু দেখা দিল : তার বিশাল বিশাল লোহার দাঁত ছিল; তা সবকিছু গ্রাস করছিল ও চূর্ণবিচূর্ণ করছিল, আর বাকিটুকু পায়ে মাড়িয়ে দিচ্ছিল ; আগের পশুদের চেয়ে এটা আলাদা ছিল—তার ছিল দশটা শিং!
8 আমি তখনও সেই শিঙের দিকে তাকিয়ে আছি, আর দেখ, সেগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র আর একটা শিং গজিয়ে উঠছে, আর এটা যেন জায়গা পায়, আগের শিংগুলির তিনটে শিং উপড়ে ফেলা হল; আর দেখ, ওই শিঙে ছিল মানুষের চোখের মত চোখ ও একটা মুখ যা দম্ভ-ভরা কথা বলে।
9 আমি তখনও তাকিয়ে আছি, এমন সময় কয়েকটা সিংহাসন এনে রাখা হল, এবং প্রাচীন একজন আসন নিলেন : তাঁর পোশাক তুষারের মত শুভ্র, ও তাঁর মাথার চুল পশমের মত শুভ্র ; তাঁর সিংহাসন ছিল অগ্নিশিখার মত, তার চাকাগুলো জ্বলন্ত আগুনের মত।
10 তাঁর সম্মুখ থেকে অগ্নি-স্রোত নির্গত হয়ে বয়ে চলছিল; লক্ষ লক্ষ কারা যেন তাঁর সেবা করছিল, এবং কোটি কোটি কারা যেন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন বিচারসভা আসন নিল, ও পুস্তকগুলো খোলা হল।
11 আমি তাকিয়ে রইলাম; আর ওই শিং যে দম্ভ-ভরা কথা উচ্চারণ করছিল, তার তীব্র শব্দে আমি তখনও সেদিকে তাকিয়ে আছি, এমন সময় আমি দেখলাম, পশুটাকে বধ করা হল, ও তার দেহ বিনষ্ট হলে পর আগুনের উপরে ছুড়ে ফেলে প্র দেওয়া হল।
12 অন্য পশুগুলো নিজ নিজ কর্তৃত্ব থেকে বঞ্চিত হল, এবং তাদের আয়ু নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই স্থির করা হল।
13 আমি রাত্রিবেলায় আবার দর্শনে দেখছিলাম, এমন সময়ে আকাশের মেঘের সঙ্গে মানবপুত্রের মত কে যেন একজন এগিয়ে আসছেন : তিনি সেই প্রাচীনজনের কাছে এসে উপস্থিত হলে তাঁকে তাঁর সাক্ষাতে আনা হল ;
14 তাঁকে আরোপ করা হল কর্তৃত্ব, মহিমা ও রাজ-অধিকার; সকল জাতি, দেশ ও ভাষার মানুষ তাঁর সেবায় নিবদ্ধ হল। তাঁর কর্তৃত্ব সনাতন যা কখনও লোপ পাবে না, এবং তাঁর রাজ্য কখনও বিলুপ্ত হবে না।
15 আমি, দানিয়েল, আমার দেহের মধ্যে আত্মায় বিষণ্ণ হলাম, আমার মনের নানা দর্শন আমাকে এতই বিহ্বল করেছিল!
16 যাঁরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের একজনের কাছে এগিয়ে গিয়ে এই সমস্ত কিছুর প্রকৃত অর্থ জিজ্ঞাসা করলাম, আর তিনি আমাকে তার অর্থ এই বলে প্রকাশ করলেন :
17 ওই চারটে বিশাল পশু হল চার রাজা, পৃথিবী থেকেই যাদের উদ্ভব হবে;
18 কিন্তু পরাৎপরের পবিত্রজনেরা রাজ্য গ্রহণ করবে এবং রাজত্ব করবে চিরকাল — যুগে যুগে চিরকাল।'
19 আমি তখন সেই চতুর্থ পশুর আসল কথা জানতে চাইলাম, সেই যে পশু অন্য সকল পশুর চেয়ে আলাদা ও অধিক ভয়ঙ্কর, যার দাঁত লোহার ও নখ ব্রঞ্জের, যা সবকিছু গ্লাস করছিল ও চূর্ণবিচূর্ণ করছিল ও বাকিটুকু পায়ে মাড়িয়ে দিচ্ছিল।
20 আর তার মাথায় সেই দশটা শিঙের অর্থ, ও যে অন্য শিংটা গজিয়ে উঠেছিল, যার সামনে তিনটে শিং পড়ে গেল; আবার জানতে চাইলাম সেই শিঙের আসল কথা, যে শিঙের চোখ ছিল ও এমন মুখ ছিল যা দম্ভ-ভরা কথা বলছিল, এবং অন্য শিংগুলোর চেয়ে যা বড় দেখাচ্ছিল।
21 আমি তাকিয়ে দেখছিলাম, এমন সময়ে সেই শিং পবিত্রজনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের উপর বিজয়ী হচ্ছিল,
22 যতক্ষণ না সেই প্রাচীনজন এলেন; তখন পরাৎপরের পবিত্রজনদের পক্ষে বিচার সম্পন্ন করা হল, এবং সেই সময় এল যখন পবিত্রজনদেরই রাজ্যভার গ্রহণ করার কথা।
23 তাই তিনি আমাকে একথা বললেন : চতুর্থ পশুটা হল পৃথিবীর চতুর্থ এক রাজ্য, যা সকল রাজ্যের চেয়ে আলাদা হবে ও সমস্ত পৃথিবীকে গ্রাস করবে, মাড়িয়ে দেবে ও চূর্ণবিচূর্ণ করবে।
24 তার দশটা শিঙের অর্থ এ: ওই রাজ্য থেকে দশ রাজার উদ্ভব হবে, আর তাদের পরে আর এক রাজার উদ্ভব হবে যে আগেকার রাজাদের চেয়ে আলাদা হবে, ও সেই তিন রাজাকে ভূপাতিত করবে;
25 সে পরাৎপরকে টিটকারি দেবে, পরাৎপরের পবিত্রজনদের উৎপীড়ন করবে, এবং উপাসনা-কাল ও বিধান বদলাবার কথাও ভাববে ; পবিত্রজনেরা এক কাল, নানা কাল ও অর্ধেক কালের জন্য তার হাতে সমর্পিত হবে।
26 পরে বিচার সম্পন্ন হবে, আর তার কর্তৃত্ব তার হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হবে, অবশেষে তাকে নিঃশেষে বিনাশ করা হবে, সে নিশ্চিহ্নই হয়ে যাবে।
27 তখন রাজ-অধিকার, কর্তৃত্ব ও সমস্ত আকাশের নিচের যত রাজ্যের মহিমা সেই পরাৎপরেরই পবিত্র জনগণকে দেওয়া হবে, যাঁর রাজ্য সনাতন রাজ্য, বিশ্বের যত কর্তৃত্ব যাঁকে সেবা করবে ও যাঁর প্রতি বাধ্যতা স্বীকার করবে।'
28 এইখানে বিবরণীর সমাপ্তি। আমি দানিয়েল মনে খুবই বিহ্বল হলাম, আমার মুখ বিবর্ণ হল, এবং এই সবকিছু হৃদয়ে গেঁথে রাখলাম।