Index

দানিয়েল - Chapter 13

1 বাবিলনে যোয়াকিম নামে একজন লোক বাস করতেন; তিনি নামে একজন স্ত্রীলোককে বিবাহ করেছিলেন; এই সুজান্না ছিলেন 'হিঙ্কিয়ার কন্যা;
2 তিনি সুজান্না ছিলেন পরম সুন্দরী ও প্রভুভীরু এক নারী।
3 তাঁর পিতামাতা ধার্মিক মানুষ ছিলেন, কন্যাটিকে তাঁরা মোশীর বিধান অনুসারে গড়ে তুলেছিলেন।
4 যোয়াকিম খুবই ধনী ছিলেন, বাড়ির পাশে তাঁর এক বাগান ছিল, এবং অন্য সকলের চেয়ে মহা সম্মানের পাত্র বলে গণ্য হওয়ায় ইহুদীরা তাঁর কাছে যেত।
5 সেই বছরে জনগণের মধ্য থেকে বিচারক পদে দু'জন প্রবীণকে বেছে নেওয়া হয়েছিল; তেমন মানুষদের বিষয়ে প্রভু বলেছিলেন, 'প্রবীণ ও বিচারকদের : মধ্য দিয়েই শঠতা বাবিলনে দেখা দিয়েছে : তারা তো কেবল চেহারায়ই জনগণের " পরিচালক।'
6 এই দু'জন মোয়াকিমের বাড়িতে প্রায়ই আসা-যাওয়া করত, এবং যাদের কোন বিবাদ বা সমস্যা থাকত, মীমাংসা সমাধানের জন্য তারা সকলে এসে এই দু'জনের সঙ্গে দেখা করত।
7 দুপুরবেলায়, লোকে চলে যাওয়ার পর, সুজান্না স্বামীর বাগানে একটু বেড়াতে আসতেন।
8 সেই দু'জন প্রবীণ দিনের পর দিন তাঁকে সেখানে গিয়ে বেড়াতে দেখত, আর ক্রমে ক্রমে তাদের অন্তরে তাঁর প্রতি দু'জনেই প্রবল আসক্তি জন্মাতে লাগল :
9 জ্ঞানবুদ্ধি হেড়ে দিয়ে তারা স্বর্গের দিকে চোখ নিবদ্ধ রাখতে আর চেষ্টা করল না, ন্যায়বিচারের কথাও ভুলে গেল।
10 দুজনেই তাঁর প্রতি প্রবল কামাসক্তিতে জ্বলছিল, কিন্তু তাদের সেই কামনা একে অপরের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখত,
11 কেননা তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার যে গভীর আকাঙ্ক্ষা তাদের ছিল, তা প্রকাশ করতে তারা লজ্জাবোধ করছিল।
12 কিন্তু তাঁকে প্রতিদিন দেখবার জন্য যথেষ্টই সচেষ্ট ছিল। একদিন একজন অপরজনকে বলল,
13 চলুন, এবার বাড়ি যাই, খাওয়া-দাওয়ার সময় এসেছে; আর তাই বলে দু'জনে যে যার পথে চলে গেল।
14 কিন্তু আবার ফিরে এসে দু'জনে হঠাৎ মুখোমুখি হল, আর তখন, ব্যাপারটা বোঝাতে বাধ্য হয়ে, দু'জনেই একে অপরের কাছে তাদের সেই প্রবল আসক্তি স্বীকার করল, এবং তাঁকে একা পাবার উদ্দেশ্যে উপযুক্ত সুযোগের জন্য মন্ত্রণা করল।
15 তখন এমনটি ঘটল যে, তারা উপযুক্ত সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছে, এমন সময় সুজান্না রীতিমত প্রবেশ করলেন; তাঁর সঙ্গে কেবল দু'জন অনুচারিণী ছিল। সেদিন যথেষ্ট গরম পড়েছিল বলে তিনি বাগানে স্নান করতে ইচ্ছা করলেন।
16 সেখানে কেউই ছিল না, কেবল সেই দু'জন প্রবীণ ছিল যারা তাঁকে চুপে চুপে লক্ষ করার জন্য ওত পেতে ছিল।
17 সুজান্না অনুচারিণীদের বললেন, 'খানিকটা তেল ও আতর নিয়ে এসো, পরে বাগানের দরজা বন্ধ কর, আমি স্নান করব।'
18 তাদের যেমন করতে আজ্ঞা করা হয়েছিল, অনুচারিণীরা সেইমত করল : বাগানের দরজা বন্ধ করে দিয়ে তারা, সুজান্না যা চেয়েছিলেন, তা নিয়ে আসবার জন্য পাশের দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকল ; তারা তো প্রবীণদের বিষয়ে কিছুই জানত না, কেননা সেই দু'জন লুকিয়ে ছিল।
19 অনুচারিণীরা চলে যাওয়ামাত্র সেই দু'জন। প্রবীণ গোপন স্থান ছেড়ে সুজান্নার কাছে ছুটে গিয়ে তাঁকে বলল,
20 দেখ, বাগানের সমস্ত দরজা এখন বন্ধ, কেউই আমাদের দেখতে পারে না, আর আমরা, আমরা যে তোমাকে খুবই কামনা করছি! রাজি হও, আমাদের কাছে ধরা দাও।
21 তুমি রাজি না হলে আমরা তোমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলব যে, তোমার সঙ্গে একজন যুবক ছিল বলেই তুমি অনুচারিণীদের বের করে দিয়েছ।'
22 সুজান্না কাঁদতে কাঁদতে বললেন, 'আমি তো সবদিক দিয়েই বিপদে আছি: আমি রাজি হলে আমার জন্য মৃত্যু! রাজি না হলে আপনাদের হাত থেকে রেহাই নেই!
23 কিন্তু প্রভুর সামনে পাপ করার চেয়ে নিরপরাধী হয়ে আপনাদের হাতে পড়া আমার পক্ষে শ্রেয়।'
24 তখন তিনি জোর গলায় চিৎকার করলেন; সেই দু'জন প্রবীণও তাঁর বিরুদ্ধে চিৎকার করতে লাগল,
25 আর তাদের একজন বাগানের দরজার দিকে দৌড় দিয়ে তা খুলে দিল।
26 বাড়ির দাসেরা বাগানে তেমন শব্দ শুনে, কিনা ঘটছে তা দেখবার জন্য পাশের দরজা দিয়ে ছুটে এল।
27 প্রবীণেরা তাদের সাজানো কথা বর্ণনা করার পর দাসেরা একেবারে বিহ্বল হয়ে পড়ল, কেননা সুজান্না সম্বন্ধে তেমন কথা কখনও বলা হয়নি।
28 পরদিন গোটা জনগণ সুজান্নার স্বামী যোয়াকিমের বাড়িতে এসে উপস্থিত হল : সেই দু'জন প্রবীণও সেখানে গেল, সুজান্নাকে প্রাণদণ্ড দেবার জন্য তারা দুরভিসন্ধিতে পূর্ণ ছিল।
29 জনগণকে উদ্দেশ করে তারা বলল, ‘হিল্কিয়ার মেয়ে, যোয়াকিমের স্ত্রী সেই সুজান্নাকে আনা হোক।' লোক পাঠিয়ে সুজান্নাকে ডাকা হল,
30 আর তিনি এলেন; তাঁর সঙ্গে তাঁর পিতামাতা, সন্তানেরা ও সকল আত্মীয়স্বজন ও এসে উপস্থিত হলেন।
31 সুজান্না দেখতে খুবই কোমলা, গঠনে খুবই সুন্দরী;
32 তাঁর মাথায় কাপড় ছিল, আর সেই মূর্তেরা তা সরিয়ে দিতে হুকুম দিল যেন তাঁর সৌন্দর্য ভোগ করতে পারে।
33 তাঁর সকল জ্ঞাতি কাঁদছিল; যারা তাঁকে দেখছিল, তারা সকলেও কাঁদছিল।
34 সেই দু'জন প্রবীণ জনগণের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর মাথায় হাত রাখল।
35 সুজান্না অশ্রুজল ফেলতে ফেলতে স্বর্গের দিকে চোখ তুললেন, তাঁর হৃদয় প্রভুর ভরসায় পূর্ণ ছিল।
36 তখন প্রবীণেরা বলল, ‘আমরা বাগানে একাই বেড়াচ্ছিলাম, এমন সময় সুজান্না দু'জন অনুচারিণীকে সঙ্গে করে এল, এবং বাগানের দরজা বন্ধ করে দিয়ে অনুচারিণীদের বিদায় দিল।
37 আর তখনই একটা যুবক তার কাছে এগিয়ে গেল—সে গোপন স্থানে লুকিয়ে ছিল—ও তার সঙ্গে মিলিত হল।
38 সেসময় আমরা বাগানের এক কোণে ছিলাম ; তেমন দুষ্কর্ম দেখে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম :
39 তাদের একসঙ্গেই থাকতে দেখেছি বটে, কিন্তু যুবকটিকে ধরতে পারলাম না, কেননা আমাদের দু'জনের চেয়ে বলিষ্ঠ হওয়ায় সে দরজা খুলে পালিয়ে গেল।
40 একে কিন্তু ধরলাম, আর এর কাছে যুবকটির পরিচয় জিজ্ঞাসা করলাম, কিন্তু এ তা বলতে রাজি হল না। আমরা এসব কিছুর সাক্ষী।'
41 তারা প্রবীণ ও জনগণের বিচারক হওয়ায় সমবেত সকল লোক তাদের কথা বিশ্বাস করল, আর সুজান্নার প্রাণদণ্ড হল।
42 তখন সুজান্না উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলেন, “হে সনাতন ঈশ্বর, তুমি যে যত গোপন বিষয় জান, তুমি যে একটা কিছু ঘটবার আগেও তা জান,
43 তুমি তো জান যে, এঁরা আমার বিষয়ে মিথ্যাসাক্ষ্য দিয়েছেন। এঁদের শঠতা আমার বিরুদ্ধে যা কিছু কল্পনা করেছে, সেবিষয়ে নিরপরাধী হয়েই আমাকে মরতে হচ্ছে!”
44 প্রভু তাঁর কণ্ঠস্বর শুনলেন;
45 এবং সুজান্নাকে মৃত্যুর দিকে চালিত করা হচ্ছে,এমন সময় প্রভু একজন তরুণের পবিত্র আত্মা জাগিয়ে তুললেন—তরুণটির নাম দানিয়েল;
46 তরুণটি চিৎকার করে বলে উঠলেন : 'এঁর রক্তপাতের জন্য আমি দায়ী নাই।"
47 সকলে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল, 'তোমার এই কথায় তুমি কী বলতে চাও? '
48 তখন দানিয়েল তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, “ইস্রায়েল সন্তান, আপনারা কি এত মূর্খ? আপনারা তো সত্যের অনুসন্ধান না করে ও ইস্রায়েলের একজন কন্যাকে কিছুই জিজ্ঞাসাবাদ না করেই তাঁকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিতা করেছেন।
49 বিচারের জায়গায় ফিরে যান, কেননা এই দুজন এর বিষয়ে মিথ্যাসাক্ষ্যই দিয়েছে।
50 লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে ফিরে গেল, আর প্রবীণবর্গ দানিয়েলকে বললেন, 'এগিয়ে এসো, আমাদের মাঝে আসন নাও, আমাদের উদ্বুদ্ধ কর, কেননা ঈশ্বর তোমাকে : প্রবীণ-উপযুক্ত গুণ মঞ্জুর করেছেন।
51 দানিয়েল বললেন, 'আপনারা এই দু'জনকে আলাদা করে রাখুন, আমি এদের জেরা করব।'
52 সেই দু'জনকে আলাদা করে রাখা হলে দানিয়েল তাদের একজনকে ডাকিয়ে এনে তাকে উদ্দেশ করে বললেন, 'ওহে, দুষ্কর্মে বৃদ্ধ হয়েছ যে তুমি! তোমার আগেকার সাধিত যত পাপ এখন তোমার নাগাল পেয়েছে :
53 তুমি অন্যায় বিচারে অপরাধীদের নির্দোষী ও নির্দোষীদের দুষ্কর্মা বলে সাব্যস্ত করতে, অথচ প্রভু বলেছেন: নির্দোষী বা ধার্মিকের প্রাণনাশ করবে না।
54 আচ্ছা, তুমি যখন এঁকে দেখেছ, তখন বল দেখি : কোন্ গাছের তলায় তাদের শুয়ে থাকতে দেখেছিলে?' প্রবীণ উত্তরে বলল, 'একটা শিরীষ গাছের তলায়।
55 দানিয়েল বললেন, "সত্যি, তোমার মিথ্যাসাক্ষ্য তোমার মাথার উপরে নেমে পড়বে; কেননা ঈশ্বরের দূত ইতিমধ্যে ঈশ্বরের কাছ থেকে রায় পেয়েছেন : তিনি তোমাকে দু'খণ্ড করে ভেঙে দেবেন।
56 এই একজনকে সরিয়ে দিয়ে তিনি অপর : একজনকে ডাকিয়ে এনে তাকে উদ্দেশ করে বললেন, “ওহে, যুদার নয়, কানানেরই বংশধর যে তুমি ! সৌন্দর্য তোমাকে ভুলিয়েছে, কামাসক্তি তোমার হৃদয় ভ্রষ্ট করেছে!
57 তোমরা ঠিক তাই করতে ইস্রায়েলের স্ত্রীলোকদের নিয়ে, আর তারা ভয়ে তোমাদের কাছে আসত। কিন্তু যুদার একটি কন্যা তোমাদের শঠতা সহ্য করেনি।
58 বল দেখি, তুমি কোন্ গাছের তলায় তাদের শুয়ে থাকতে দেখেছ?” প্রবীণ উত্তর দিল, 'একটা ওক গাছের তলায়।
59 দানিয়েল বললেন, 'সত্যি, তোমারও মিথ্যাসাক্ষ্য তোমার মাথার উপরে নেমে পড়বে; কেননা ঈশ্বরের দূত তোমাকে দু'খণ্ড করে মৃত্যু ঘটাবার জন্য খড়্গা হাতে করে তোমার অপেক্ষায় রয়েছেন।'
60 তখন গোটা জনসমাবেশ আনন্দচিৎকারে ফেটে পড়ল, এবং সেই ঈশ্বরকে ধন্য বলল, যিনি, তাঁর উপরে প্রত্যাশা রাখে যারা, তাদের পরিত্রাণ করেন।
61 পরে সেই দু'জন প্রবীণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে—যাদের দানিয়েল তাদের নিজেদের মুখে তাদের স্বীকার করিয়েছিলেন যে তারা মিথ্যাসাক্ষ্য দিয়েছিল— জনসমাবেশ সেই দণ্ডে তাদের দণ্ডিত করল, তারা যে দণ্ডে পরকে দণ্ডিত করতে চেয়েছিল,
62 এবং মোশীর বিধান অনুসারে তাদের প্রাণদণ্ড দিল। সেইদিন নিরপরাধীর রক্ত বাঁচানো হল।
63 হিন্ধিয়া ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের কন্যা সুজান্নার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন, তাঁদের সঙ্গে সুজান্নার স্বামী যোয়াকিম ও তাঁর সকল আত্মীয়ও ধন্যবাদ জানালেন, কেননা সুজান্নার মধ্যে অসতের মত কিছুই পাওয়া গেল না।
64 সেদিন থেকে দানিয়েল জনগণের দৃষ্টিতে মহান হয়ে উঠলেন।