Index

দানিয়েল - Chapter 4

1 আমি নেবুকাল্লেজার আমার ঘরে, আমার প্রাসাদে, সুখে-শান্তিতে ছিলাম।
2 আমি এমন স্বপ্ন দেখলাম যা আমাকে সন্ত্রাসিত করল, এবং শয্যায় শুয়ে আমার যে নানা চিন্তা হল ও আমার মনে যে দর্শন দেখা দিল, তা আমাকে উদ্বিগ্ন করল।
3 তাই আমি আজ্ঞাপত্র জারি করলাম, যেন আমাকে সেই স্বপ্নের অর্থ জানাবার জন্য বাবিলনের সমস্ত জ্ঞানী লোকদের আমার কাছে আনা হয়।
4 মন্ত্রজালিক, গণক, কান্দীয় ও জ্যোতির্বেত্তারা আমার কাছে এলে আমি তাদের কাছে সেই স্বপ্ন ব্যক্ত করলাম, কিন্তু তারা আমাকে তার অর্থ বলতে পারল না।
5 অবশেষে দানিয়েল—ধার নাম আমার দেবের নাম অনুসারে বেন্টেশাজার—যাঁর অন্তরে পবিত্র দেবদের আত্মা বিরাজ করে, তিনি আমার সাক্ষাতে এলেন, আর আমি তাঁর কাছে সেই স্বপ্ন ব্যক্ত করলাম; যথা :
6 'হে মন্ত্রজালিকদের প্রধান বেল্টেশাজার, আমি জানি, তোমার অন্তরে পবিত্র দেবদের আত্মা বিরাজ করে, এবং কোন রহস্য তোমার পক্ষে দুরূহ নয়; আমি স্বপ্নে যে যে দর্শন পেয়েছি, তা ও তার অর্থ আমার কাছে ব্যক্ত কর।
7 শয্যায় শুয়ে আমার মনে যে দর্শন দেখা দিল, তা এই :
আমি চেয়ে দেখলাম,
আর দেখ, পৃথিবীর মধ্যস্থলে একটা গাছ রয়েছে,
উচ্চতায় তা বিশাল।
8 পাছটা বৃদ্ধি পেয়ে বলবান ও উচ্চতায় আকাশছোঁয়াই হল,
তা সমস্ত পৃথিবীর প্রান্ত থেকেই দেখা যেতে পারত।
9 তার পাতা সুন্দর ও তার ফল প্রচুর ছিল,
তার মধ্যে সকলের জন্য খাদ্য ছিল ;
তার ছায়ায় বন্যজন্তুরা আশ্রয় নিত,
তার শাখায় আকাশের পাখিরা বাসা বাঁধত,
এবং সমস্ত প্রাণী তা থেকে পুষ্টি পেত।
10 আমি শয্যায় শুয়ে, আমার মনে যে দর্শন দেখা দিচ্ছিল, তা লক্ষ করছিলাম, আর দেখ, একজন প্রহরী, পবিত্র এক ব্যক্তি, স্বর্গ থেকে নেমে এলেন।
11 তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন,
গাছটা কাট, তার শাখা কেটে ফেল,
তার পাতা ঝেড়ে ফেল, তার ফল ছড়িয়ে দাও ;
তার তলা থেকে পশুরা ও তার শাখা থেকে পাখিরা পালিয়ে যাক।
12 কিন্তু মাটিতে তার মূলের কাণ্ডকে
লোহা ও ব্রঞ্জের শেকলে আবদ্ধ করে
মাঠের কোমল ঘাসের মধ্যে রাখ;
গাছটা আকাশের শিশিরে ভিজুক,
এবং তার শেষ দশা হোক মাঠের পশুদের সঙ্গে।
13 তার হৃদয়ের পরিবর্তন হোক,
ও তাকে মানুষের হৃদয়ের বদলে পশুরই হৃদয় দেওয়া হোক :
তার উপর দিয়ে সাত কাল কেটে যাবে।
14 একথা প্রহরীবর্গের সিদ্ধান্তে জারীকৃত,
ও বিষয়টা পবিত্রজনদের দ্বারাই ঘোষিত,
যাতে জীবিত সকল মানুষ জানতে পারে যে,
মানব রাজ্যের উপরে পরাৎপরই কর্তৃত্ব করেন :
তিনি যাকে তা দিতে ইচ্ছা করেন, তাকে তা দেন,
ও মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে নীচ লোককেও
তার উপরে নিযুক্ত করেন।
15 এ সেই স্বপ্ন, যা আমি নেবুকাফ্লেজার রাজা দেখেছি। এখন হে বেল্টেশাজার, তার অর্থ আমাকে বল। তুমিই তা বলতে পার, কেননা আমার রাজ্যের কোন জ্ঞানীগুণী আমাকে তার অর্থ বলতে পারে না, যেহেতু তোমারই অন্তরে পবিত্র দেবদের আত্মা বিরাজ করে।
16 তখন বেল্টেশাজার নামে পরিচিত দানিয়েল কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে রইলেন, ভাবনায় বিহ্বল হলেন। রাজা বললেন, “হে বেন্টেশাজার, স্বপ্নটা ও তার অর্থ তোমাকে বিহ্বল না করুক।' বেন্টেশাজার উত্তরে বললেন, 'প্রভু আমার, এই স্বপ্ন আপনার শত্রুদেরই প্রতি প্রযোজ্য হোক, ও তার অর্থ আপনার বিপক্ষদেরই প্রতি সিদ্ধিলাভ করুক।
17 আপনি সেই যে গাছ দেখেছিলেন, যা বৃদ্ধি পেয়ে বলবান ও উচ্চতায় আকাশছোঁয়াই হল, ও যা সমস্ত পৃথিবীর প্রান্ত থেকে দেখা যেতে পারত,
18 যার সুন্দর সুন্দর পাতা ও প্রচুর প্রচুর ফল ছিল, যার মধ্যে সকলের জন্য খাদ্য ছিল, যার তলে বন্যজন্তুরা আশ্রয় নিত, যার শাখায় আকাশের পাখিরা বাসা বাঁধত,
19 হে রাজন, সেই গাছ আপনি নিজেই : আপনি তো বৃদ্ধি পেয়ে বলবান হলেন, আপনার উচ্চতা আকাশছোঁয়া হল ও আপনার কর্তৃত্ব পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত ব্যাপ্ত হল।
20 মহারাজ দেখেছিলেন, একজন প্রহরী, একজন পবিত্র ব্যক্তি, স্বর্গ থেকে নেমে আসছিলেন, আর বলছিলেন। গাছটা কাট, তা ধ্বংস কর, কিন্তু মাটিতে তার মূলের কাণ্ডকে লোহা ও ব্রঞ্জের শেকলে আবদ্ধ করে মাঠের কোমল ঘাসের মধ্যে রাখ; তা আকাশের শিশিরে ভিজুক, তার শেষ দশা হোক বন্যজন্ধুদের সঙ্গে, যতদিন না তার উপর দিয়ে সাত কাল কেটে যায় ;
21 হে মহারাজ, এর অর্থ এই, এবং আমার প্রভু মহারাজের উপরে যা ঘটবার কথা, পরাৎপরের সেই নিরূপিত আজ্ঞা এ:
22 আপনাকে মানবসমাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে,
আপনার বসতি হবে বন্যজন্তুদের সঙ্গে,
বলদের মত আপনাকে ঘাস খাওয়ানো হবে,
আপনি আকাশের শিশিরে ভিজবেন,
এবং আপনার উপর দিয়ে সাত কাল কেটে যাবে,
যতদিন না আপনি স্বীকার করেন যে,
মানব রাজ্যের উপরে পরাৎপরই কর্তৃত্ব করেন :
তিনি যাকে তা দিতে ইচ্ছা করেন, তাকে তা দেন।
23 পরে এমন কথা বলা হয়েছিল, যেন গাছটার মূল ও তার কাণ্ড রেখে দেওয়া হয় : তার মানে, আপনি যখন স্বীকার করবেন যে, স্বর্গই কর্তৃত্ব করেন, তখন আপনার রাজ্য আপনার হাতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
24 সুতরাং, হে রাজন, আমার পরামর্শ গ্রহণ করুন : দয়াধর্ম দ্বারা আপনার সমস্ত পাপ এবং দীনদুঃখীদের প্রতি এ দয়া দেখিয়েই আপনার যত অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করুন; হয় তো আপনার শান্তিকাল প্রসারিত হবে।
25 সেই সমস্ত কিছু নেবুকাম্নেজার রাজার বেলায় সিদ্ধিলাভ করল।
26 বারো মাস পরে তিনি বাবিলনের রাজপ্রাসাদের ছাদে বেড়াচ্ছিলেন,
27 এমন সময় রাজা বলে উঠলেন, 'এ কি সেই মহতী বাবিলন নয়, যা আমি আমার মাহাত্ম্যের গৌরবের উদ্দেশ্যে আমার মহাপ্রভাবেই রাজপ্রাসাদই বলে নির্মাণ করেছি?"
28 রাজার মুখ থেকে এই বাণী নির্গত হতে না হতেই আকাশ থেকে এক কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হল :
“হে রাজন্ নেবুকাদ্রেজার!
তোমাকে উদ্দেশ করে কথা বলা হচ্ছে:
তোমার রাজ-অধিকার তোমা থেকে কেড়ে নেওয়া হল !
29 তোমাকে মানবসমাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে,
তোমার বসতি হবে বন্যজন্তুদের সঙ্গে,
বলদের মত তোমাকে ঘাস খাওয়ানো হবে,
ও তোমার উপর দিয়ে সাত কাল কেটে যাবে,
যতদিন না তুমি স্বীকার কর যে,
মানব রাজ্যের উপরে পরাৎপরই কর্তৃত্ব করেন :
তিনি যাকে তা দিতে ইচ্ছা করেন, তাকে তা দেন।”
30 সেই মুহূর্তেই নেবুকাড্রেজারের বেলায় সেই বাণী সিদ্ধিলাভ করল: তাঁকে মানবসমাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল, তিনি বলদের মত ঘাস খেতে লাগলেন, তাঁর শরীর আকাশের শিশিরে ভিজল, ক্রমে তাঁর লোম ঈগলের পালকের মত, ও তাঁর নখ পাখির নখরের মত হয়ে উঠল।
31 ‘কিন্তু সেই সময় শেষে আমি নেবুকাদ্রেজার স্বর্গের দিকে চোখ তুললাম, ও আমার মধ্যে চেতনা ফিরে এল; তাই আমি পরাৎপরকে ধন্যবাদ জানালাম এবং সেই চিরজীবনময় ঈশ্বরের প্রশংসা ও গৌরবকীর্তন করলাম
যাঁর কর্তৃত্ব চিরকালীন কর্তৃত্ব,
ও খাঁস রাজ্য যুগযুগস্থায়ী।
32 পৃথিবীর অধিবাসী সকলে
তাঁর সামনে শূন্যতাই যেন
তিনি স্বৰ্গীয় বাহিনী ও মর্ত অধিবাসীদের উপরে
যেমন খুশি তেমনি করেন।
এমন কেউই নেই যে তাঁর হাত থামিয়ে দেবে,
ও তাঁকে বলবে : তুমি কী করছ?
33 সেই মুহূর্তে আমার মধ্যে চেতনা ফিরে এল, এবং আমার রাজ্যের গৌরবার্গে আমার প্রতাপ ও গরিমা আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল: আমার মন্ত্রীরা ও আমার অমাত্যেরা আমার অন্বেষণ করল, এবং আমি আমার রাজ্যে পুনঃস্থাপিত হলাম, ও আমার মহিমা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেল।
34 এখন আমি নেবুকাল্লেজার সেই স্বর্গরাজের প্রশংসা, বন্দনা ও গৌরবকীর্তন করি, যাঁর সমস্ত কাজ সত্যময়, ও যার সকল পথ ন্যায্য : সগর্বে চলে যারা, তিনি তাদের অবনমিত করতে সক্ষম।”