1 আস্তিয়াগেস রাজা তাঁর পিতৃপুরুষদের সঙ্গে মিলিত হলে তাঁর পদে পারসিক সাইরাস রাজ্যভার গ্রহণ করেন।
2 দানিয়েল ছিলেন রাজার ঘনিষ্ঠ ; এমনকি, রাজবন্ধুদের মধ্যে তিনিই অধিক সম্মানের পাত্র ছিলেন।
3 সেসময় বাবিলনীয়দের বেল নামে একটা দেবমূর্তি ছিল; প্রত্যেক দিন লোকে তাকে বারো বস্তা করে সেরা ময়দা, চল্লিশটা মেষ ও ছ’মণ আঙুররস নিবেদন করত।
4 রাজাও এই মূর্তিকে পূজা করতেন, ও প্রত্যেক দিন গিয়ে তার উদ্দেশে প্রণিপাত করতেন।
5 কিন্তু দানিয়েল তাঁর আপন ঈশ্বরেরই উদ্দেশে প্রণিপাত করতেন বলে রাজা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তুমি বেলের উদ্দেশে কেন প্ৰণিপাত কর না?' দানিয়েল উত্তরে বললেন, 'আমি মানুষের হাতে তৈরী মূর্তির পূজা করি না, কেবল সেই জীবনময় ঈশ্বরকে পূজা করি, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা ও সমস্ত প্রাণীর প্রভু।
6 রাজা বলে চললেন, 'তবে তুমি কি একথা বিশ্বাস কর না যে, বেল জীবনময় ঈশ্বর? তিনি প্রত্যেক দিন যে কতই না পান করেন, কতই না খান, তা তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না?"
7 দানিয়েল হাসি মুখে রাজাকে উত্তর দিয়ে বললেন, 'মহারাজ, নিজেকে ভোলাবেন না! সেই মূর্তি ভিতরে মাটির ও বাইরে ব্রঞ্জের; তা কখনও কিছুই খায়নি, কখনও কিছুই পান করেনি।'
8 তাতে রাজা ক্ষুব্ধ হলেন, এবং বেল-দেবের পুরোহিতদের ডেকে তাদের বললেন, 'তোমরা যদি আমাকে না বল, এই সমস্ত খরচ কে খায়, তবে মরবে; কিন্তু যদি আমাকে দেখাতে পার যে, বেল দেব সেইসব কিছু খান, তবে দানিয়েল মরবে, কেননা সে বেলকে টিটকারি দিয়েছে।
9 দানিয়েল রাজাকে বললেন, 'আপনার কথামত হোক।' স্ত্রী-পুত্রদের কথা না ধরে বেলের পুরোহিতেরা সংখ্যায় ছিল সত্তরজন।
10 রাজা দানিয়েলকে সঙ্গে করে বেলের গৃহে গেলেন,
11 এবং বেলের পুরোহিতেরা তাঁকে বলল, 'দেখুন, আমরা এখান থেকে বাইরে চলে যাচ্ছি; আপনিই, হে মহারাজ, খাবার সাজান ও মেশানো আঙুররস ঢালুন ; পরে দরজা বন্ধ করে আপনার নিজের আঙটি দিয়ে তার উপর সীলমোহরের ছাপ মেরে দিন। আগামীকাল সকালে এখানে এসে আপনি যদি দেখতে না পান যে, বেল সবকিছু খেয়েছে, তবে আমাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক, অন্যথায়, আমাদের যিনি নিন্দা করেছেন, সেই দানিয়েলকেই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হোক।'
12 তারা তো উদ্বিগ্ন ছিল না, কারণ টেবিলের নিচে একটা গোপন পথ প্রস্তুত করেছিল, আর সেই পথ দিয়ে তারা রীতিমত ফিরে যেত ও সমস্ত কিছু নিজ নিজ ঘরে নিয়ে যেত।
13 তখন এমনটি ঘটল যে, তারা চলে গেলে রাজা বেলের সামনে খাবার সাজিয়ে রাখলেন;
14 এদিকে দানিয়েল রাজার দাসদের কিছুটা ছাই আনতে হুকুম দিলেন, আর তারা কেবল রাজার উপস্থিতিতেই তা মন্দিরের সমস্ত মেঝেতে ছড়িয়ে দিল ; পরে বাইরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল, এবং রাজার আঙটি দিয়ে তার উপর সীলমোহরের ছাপ মেরে দিয়ে চলে গেল।
15 সেই রাতে পুরোহিতেরা রীতিমত তাদের স্ত্রী-পুত্রদের সঙ্গে এসে সবকিছু খেল, সবকিছু পান করল।
16 পরদিন রাজা খুব সকালে উঠলেন, দানিয়েলও উঠলেন।
17 রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “দানিয়েল, সীলমোহরের ছাপগুলো কি এখনও অক্ষুণ্ণ? দানিয়েল উত্তর দিলেন, 'হ্যাঁ, মহারাজ, সবগুলো অক্ষুণ্ণ।
18 দরজা খুলে রাজা টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, 'আহা বেল, তুমি মহান! তোমাতে হলনা নেই।”
19 দানিয়েল মুচকি হাসলেন, এবং পাছে রাজা ভিতরে যান, তাঁকে সংযত রেখে বললেন, 'আপনি এবার মেঝেরই দিকে তাকান, একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখুন, সেই পদচিহ্ন কাদের।
20 রাজা বললেন, আমি তো পুরুষ, নীলোক ও ছেলেদেরই পদচিহ্ন দেখতে পাচ্ছি!'
21 ক্রোধে জ্বলে উঠে তিনি পুরোহিতদের তাদের স্ত্রী-পুত্রদের-সমেত গ্রেপ্তার করালেন; পরে তাঁকে সেই গোপন দরজা দেখানো হল, যা দিয়ে তারা ঢুকে, টেবিলে যা কিছু থাকত, তা সবই খেয়ে ফেলত।
22 রাজা তাদের প্রাণদণ্ড দিলেন, বেলকে দানিয়েলের হাতে তুলে দিলেন, আর দানিয়েল মূর্তিটাকে তার মন্দির-সমেত ধ্বংস করলেন।
23 বিশাল একটা নাগদানব ছিল, তাকেও বাবিলনীয়েরা পূজা করত।
24 রাজা দানিয়েলকে বললেন, 'এবার তুমি বলতে পারবে না যে, ইনি জীবনময় ঈশ্বর নন; অতএব তাঁর উদ্দেশে প্রণিপাত কর।"
25 দানিয়েল বললেন, 'আমি আমার ঈশ্বর প্রভুর উদ্দেশে প্রণিপাত করি, তিনিই জীবনময় ঈশ্বর। মহারাজ, আপনি অনুমতি দিলে আমি কোন খড়া বা লাঠি হাতিয়ার না করে নাগদানবটাকে বধ করব।'
26 রাজা বললেন, 'অনুমতি দিলাম।”
27 তখন দানিয়েল খানিকটা আলকাতরা, চর্বি ও লোম নিয়ে এক হাঁড়িতে তা পাক করলেন, পরে পিঠা তৈরি করে তা নাগদানবের মুখে ছুড়লেন, আর নাগদানবটা তা গিলে ফেলে ফেটে গেল; পরে তিনি বললেন, 'এই যে আপনাদের পূজার বস্তু!
28 ব্যাপারটা শুনে বাবিলনীয়েরা খুবই ক্ষুব্ধ হল; তারা রাজার বিরুদ্ধে উঠে বলল, 'রাজা ইহুদী হলেন : তিনি বেলকে ধ্বংস করলেন, নাগদানবকে বধ করলেন, পুরোহিতদের প্রাণদণ্ড দিলেন।'
29 তারা তাঁকে গিয়ে বলল, 'দানিয়েলকে আমাদের হাতে তুলে দিন, নইলে আপনাকে ও আপনার পরিবার-পরিজন সকলকে মেরে ফেলব।
30 তারা রাজার উপরে এতই চাপ দিল যে, রাজা দেখলেন, আর উপায় নেই, দানিয়েলকে তাদের হাতে তুলে দিতেই হবে।
31 তারা তাঁকে সিংহের গর্তে ফেলে দিল, আর তিনি সেখানে ছ' দিন থাকলেন।
32 সেই গর্তে সাতটা সিংহ ছিল: প্রত্যেক দিন দু'টো মানুষের লাশ ও দু'টো মেষ তাদের দেওয়া হত; কিন্তু এবারে তাদের কিছুই দেওয়া হল না, যেন দানিয়েলকে গ্রাস করে।
33 সেসময় হাবাকুক নবী যুদেয়ায় ছিলেন; তিনি একটা শুরুয়া প্রস্তুত করে ও একটা পাত্রে রুটি টুকরো টুকরো করে নিয়ে মাঠে ফসলকাটিয়েদের কাছে দিতে যাচ্ছিলেন।
34 প্রভুর দূত তাঁকে বললেন, 'তুমি গিয়ে এই খাবার দানিয়েলকে দাও; সে বাবিলনে, সিংহের গর্তের মধ্যে আছে।'
35 হাবাকুক উত্তরে বললেন, 'প্রভু, আমি তো বাবিলন কখনও দেখিনি, সেই গর্ত সম্বন্ধেও কিছু জানি না।
36 তখন প্রস্তুর দূত তাঁকে চুল ধরে বায়ু-বেগে বাবিলনে নিয়ে গিয়ে সিংহের গর্তের মুখে নামিয়ে রাখলেন।
37 হাবাকুক চিৎকার করে বললেন, দানিয়েল, দানিয়েল, এই খাবার নাও, যা ঈশ্বর তোমার কাছে পাঠালেন।
38 দানিয়েল বলে উঠলেন, 'ঈশ্বর, তুমি আমার কথা স্মরণ করলে! যারা তোমাকে ভালবাসে, তাদের তুমি ফেলে রাখনি।'
39 দানিয়েল উঠে খেতে লাগলেন, আর এদিকে প্রভুর দূত হাবাকুককে একনিমেষে আগেকার জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন।
40 সপ্তম দিনে রাজা দানিয়েলের জন্য শোক পালন করতে এলেন ; গর্তের ধারে এসে পৌঁছে তিনি ভিতরে তাকালেন, আর দেখ, দানিয়েল সেখানে বসে আছেন।
41 তখন জোর গলায় বলে উঠলেন : 'হে প্রভু, দানিয়েলের ঈশ্বর, তুমি মহান! তুমি ব্যতীত অন্য ঈশ্বর নেই!'
42 পরে তিনি সেই গর্ত থেকে দানিয়েলকে বের করে আনালেন, এবং তার মধ্যে তাদেরই নিক্ষেপ করালেন, যারা দানিয়েলের সর্বনাশের জন্য চক্রান্ত করেছিল; আর তাদের একনিমেষে তাঁর চোখের সামনেই গ্রাস করা হল।