1 ঈশ্বরের সামনে তোমাদের সাধিত পাপের কারণে বাবিলনীয়দের রাজা
2 নেবুকাদ্রেজার দ্বারা তোমাদের বন্দি অবস্থায় বাবিলনে নিয়ে যাওয়া হবে। একবার সেই বাবিলনে এসে পৌঁছে তোমরা বহুবছর ও দীর্ঘকাল ধরে – সাত পুরুষ ধরেই সেখানে থাকবে; তারপরে আমি তোমাদের সেখান থেকে শান্তিতে ফিরিয়ে আনব।
3 ইতিমধ্যে বাবিলনে তোমরা রুপো, সোনা ও কাঠের কতগুলি দেবমূর্তি দেখতে পারে যা কাঁধে করে বহন করা হয় ও বিজাতীয়দের অন্তরে ভয় সঞ্চার করে।
4 তাই তোমরা সাবধান থাক, সেই বিদেশীদের মত কাজ করো না ; তাদের দেব-দেবীর ভয় তোমাদের দখল না করুক
5 যখন তোমরা সেগুলির সামনে ও পিছনে সেই বিপুল জনতাকে প্রণিপাত করতে দেখবে; বরং মনে মনে বল “মহাপ্রভু, তোমারই কাছে আমাদের প্রণিপাত করতে হয়।”
6 কেননা আমার দূত তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছে, সে তোমাদের প্রাণের যত্ন নেবে।
7 সেগুলির জিহ্বা শিল্পকার দ্বারাই মাজা, আবার সেগুলিতে সোনা ও রুপো মোড়া হয়, তবু সেইসব মায়ামাত্র, কথা বলতেও অক্ষম।
8 বিলাসিনী যুবতীর প্রতি যেমন করা হয়, তারা তেমনি সোনা নিয়ে তাদের দেব-দেবীকে মাথায় মুকুট সাজায়।
9 এমনকি, পুরোহিতেরা মাঝে মাঝে তাদের দেব-দেবী থেকে সোনা-রুপো কেড়ে নিয়ে নিজেদের জন্য তা ব্যয় করে বারান্দার সেবাদাসীদের দান করে।
10 আরও, তারা সোনা, রুপো ও কাঠের সেই মূর্তিগুলিকে ঠিক মানুষের মত পোশাক দিয়ে অলঙ্কৃত করে ; কিন্তু তবুও সেগুলি মরচে ও পোকা থেকে রেহাই পেতে অক্ষম।
11 সেগুলির গায়ে বেগুনি ক্ষোম-পোশাক দেওয়ার পর, দেবালয়ের ধুলা সেগুলির উপরে প্রচুর পরিমাণেই পড়ে বিধায় সেগুলির মুখ পরিষ্কার করা দরকার হয়।
12 দেবের নিজস্ব রাজদণ্ডও আছে, ঠিক যেন একজন প্রদেশপালের মত, কিন্তু তাকে যে কেউ অপমান করে, তাকে সে নিশ্চিহ্ন করতে অক্ষম।
13 তার ডান হাতে খড়্গা ও লাঠিও থাকতে পারে, কিন্তু যুদ্ধ ও চোরদের হাত থেকে সে নিজেকে রক্ষা করতে অক্ষম।
14 তাতে স্পষ্টই দাঁড়ায় যে, সেগুলি ঈশ্বর নয়; সুতরাং তোমরা সেগুলিকে ভয় পেয়ো না!
15 মাটির পাত্র একবার ভেঙে গেলে যেমন অকেজো হয়, তাদের দেবালয়ে দাঁড় করানো দেব-দেবীও তেমনি।
16 যারা সেখানে প্রবেশ করে, তাদের পায়ে ওড়ানো ধুলাতেই পূর্ণ সেগুলির চোখ।
17 যে কেউ রাজাকে অপমান করে, তাকে মৃত্যুর দিকে চালিত করতে হবে বিধায় তার চারদিকে সমস্ত দরজা যেমন আটকিয়ে রাখা হয়, তেমনি পুরোহিতেরা দেবালয়কে দরজা, তালা ও অর্গল দিয়ে সংরক্ষিত করে, পাছে সবকিছু চোরদের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়।
18 প্রদীপও জ্বালায় তারা, এমনকি নিজেদের জন্য যতগুলো জ্বালায়, তার চেয়ে আরও বেশি, কিন্তু সেই দেব-দেবী কাউকে দেখতে পারে না।
19 সেগুলি দেবালয়ের কড়িকাঠগুলোর একটার মত; জানা কথা যে, কড়িকাঠের ভিতরটা পোকায় খায়; সেইমত মাটি থেকে আসা যত পোকাও সেই সমস্ত দেব-দেবী গ্রাস করে, আর তাদের সঙ্গে তাদের পোশাকও গ্রাস করে, আর সেই দেব-দেবী কিছুই টের পায় না!
20 দেবালয়ের ধূমে সেগুলির মুখ কালো হয়;
21 সেগুলির গায়ে ও মাথায় বাদুড়ে, দোয়েল ও নানা রকম পাখি, এমনকি বিড়ালেও বসে।
22 তাতে তোমরা বুঝতে পার যে, সেগুলি ঈশ্বর নয়: সুতরাং সেগুলিকে ভয় পেয়ো না।
23 সৌন্দর্যের জন্য সেগুলি যে সোনায় অলঙ্কৃত, কেউ তার মরচে না ওঠালে সেই সোনা উজ্জ্বল হয় না; ঢালাই করার সময়েও সেগুলি কিছুই টের পাচ্ছিল না।
24 সেগুলিকে কিনবার জন্য যত অর্থ দেওয়া হয়েছে না কেন, তবু সেগুলির মধ্যে প্রাণবায়ু নেই।
25 আসল পা না থাকায় সেগুলিকে কাঁধে করে বহন করা হয়, তাতে মানুষের কাছে নিজেদের লজ্জাকর অবস্থা দেখায়; তাদের ভক্তেরা নিজেরাও লজ্জায় অভিভূত হয়, কেননা মাটিতে পড়লে সেগুলি নিজে থেকে উঠে দাঁড়াতে পারে না।
26 সোজা করে দাঁড় করালেও সেগুলি আপনা আপনি নড়বে না, কাত হয়ে পড়লেও নিজে থেকে সোজা হবে না; সেগুলির সামনে যে অর্ঘ্য রাখা হয়, তা ঠিক যেন মৃতদেরই সামনে রাখা হয়।
27 তাদের কাছে যা কিছু বলিরূপে উৎসর্গ করা হয়, তাদের পুরোহিতেরা তা বিক্রি করে লাভবান হয়; এদের বধূরাও বলির একটা অংশ লবণের মধ্যে রাখে, কিন্তু দরিদ্রদের ও অসহায়দের কিছুই দেয় না; আর তাদের বলির কথা বলতে গেলে, অশুচি অবস্থায় ও সম্প্রতি প্রসব করেছে যে স্ত্রীলোকেরাও তা নির্দ্বিধায় ছোঁয়।
28 তাতে তোমরা বুঝতে পার যে, সেগুলি ঈশ্বর নয়; সুতরাং সেগুলিকে ভয় পেয়ো না।
29 আর আসলে সেগুলিকে কেমন করে ঈশ্বর বলা চলে যখন স্ত্রীলোকেরাও এই রুপো, সোনা ও কাঠের মূর্তির কাছে অর্ঘ্য নিবেদন করে?
30 সেগুলির দেবালয়ে পুরোহিতেরা বসে থাকে—তাদের পোশাক ছেঁড়া, মাথা ও মুখ মুণ্ডিত আর মাথা অনাবৃত।
31 তাদের দেব-দেবীর সামনে তারা চিৎকার করে জোর গলায় চেঁচায়, যেমনটি লোকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ভোজসভায় করে।
32 পুরোহিতেরা তাদের দেব-দেবীর পোশাক কেড়ে নিয়ে নিজেদের স্ত্রী-পুত্রদের পরায়।
33 তেমন মূর্তিগুলি কারও উপকার কি অপকারের প্রতিদান দিতে অক্ষম, কোনও রাজাকেও নিযুক্ত কি পদচ্যুত করতে অক্ষম,
34 ঐশ্বর্য ও অর্থও মঞ্জুর করতে অক্ষম, আর তাদের কাছে কেউ মানত করে তা পূরণ না করলেও তারা তার কাছে জবাবদিহি চাইতে অক্ষম।
35 সেগুলি মানুষকে মৃত্যু থেকে নিস্তার করে না, দুর্বলকেও বলবানের হাত থেকে উদ্ধার করে না:
36 অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয় না, মানুষকেও সঙ্কট থেকে উদ্ধার করে না;
37 বিধবার প্রতি সেগুলির দয়া নেই, এতিমের মঙ্গলও করে না।
38 সোনা ও রুপোয় মোড়া সেই কাঠের মূর্তি এমন পাথরেরই মত যা পাহাড় থেকে কাটা হয়েছে। সেগুলির ভক্তদের লজ্জা পেতেই হবে।
39 সুতরাং, কেমন করে মানুষ ভাববে ও প্রচার করবে যে, সেগুলি ঈশ্বর?
40 তাছাড়া, কান্দীয়েরা নিজেরাই সেগুলির প্রতি তত সম্মান দেখায় না; বস্তুত এরা কথা বলতে অক্ষম একটা বোবাকে পেলে বেল-দেবের কাছে তাকে উপস্থিত করে, এবং প্রার্থনা করে যেন বেল দেব তাকে বাকশক্তি দেয়—ঠিক যেন বেল-দেব তাদের প্রার্থনা শুনতে পায়!
41 সচেতন হয়েও এরা দেবমূর্তিগুলিকে ত্যাগ করতে অক্ষম, এর কারণ, এরা নির্বোধ!
42 স্ত্রীলোকেরা কোমরে দড়ি বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় বসে খড় জ্বালায়,
43 আর যখন তাদের একজনকে কোন পথিক দ্বারা বেছে নেওয়া হয়, তখন সে, সেই পথিকের সঙ্গে মিলিতা হওয়ার পর, তার পাশে যে বসে আছে, তাকে বিদ্রূপ করে, কেননা সে তার মত যোগ্য বলে গণ্য হয়নি ও তার দড়ি ছিন্ন হয়নি।
44 দেবমূর্তিগুলির চারদিকে যা কিছু ঘটে, তা সবই মিথ্যা; সুতরাং, কেমন করে মানুষ ভাববে ও প্রচার করবে যে, সেগুলি ঈশ্বর?
45 দেবমূর্তিগুলি শিল্পকার ও স্বর্ণকারদের কাজমাত্র; মূর্তি ছাড়া আর কিছু নয়: শিল্পকার সেগুলির বিষয়ে যা তৈরি করতে ইচ্ছা করে, মূর্তি তা-ই মাত্র।
46 যারা সেগুলি তৈরি করে, তারা নিজেরা যখন দীর্ঘায়ু নয়, তখন তাদের তৈরী বস্তু কেমন ঈশ্বর হতে পারে?
47 তারা তাদের বংশধরদের কাছে কেবল মিথ্যা ও লজ্জাই রেখে যায়।
48 বস্তুত যুদ্ধ ও দুর্বিপাক এসে পড়লে পুরোহিতেরা নিজেদের মধ্যে মন্ত্রণা করে তারা কেমন করে নিজেদের মূর্তিগুলির সঙ্গে নিজেদের লুকোতে পারবে।
49 তবে মানুষ কেমন করে না বুঝবে যে, যারা যুদ্ধ ও অমঙ্গল থেকে নিজেদের বাঁচাতে অক্ষম, তারা ঈশ্বর নয়?
50 আর যেহেতু সেগুলি সোনা ও রুপোতে মোড়া কাঠের তৈরী, সেজন্য স্পষ্ট প্রকাশ পাবে যে, সেগুলি মিথ্যামাত্র; সকল জাতি ও রাজার কাছে একথা স্পষ্ট হবে যে, সেগুলি ঈশ্বর নয়, কেবল মানুষের হাতের কাজ, সমস্ত ঐশ্বরিক গুণ-বিহীন।
51 তবে কি আর এমন কেউ থাকতে পারে, যাকে এখনও বোঝাতে হবে যে, সেগুলি ঈশ্বর নয়?
52 বস্তুত সেগুলি দেশের উপরে রাজাকে নিযুক্ত করতে অক্ষম, মানুষকে বৃষ্টিও মঞ্জুর করতে অক্ষম:
53 নিজেদের বিবাদেরও সমাধান করে না, অত্যাচারিতকেও মুক্ত করে না; আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থলে থাকা কাক যেমন নিরুপায়, সেগুলিও তেমনি নিরুপায়।
54 সোনা ও রুপোতে মোড়া এই কাঠের দেব-দেবীর দেবালয়ে যদি আগুন লাগে, তবে তাদের পুরোহিতেরা পালিয়ে নিজেদের বাঁচায়, কিন্তু সেগুলি কড়িকাঠের মত সেখানে থেকে পুড়ে যায়।
55 সেগুলি একটি রাজার সামনে বা শত্রুদের সামনে দাঁড়াতে পারে না।
56 সুতরাং, কেমন করে মানুষ ভাববে ও প্রচার করবে যে, সেগুলি ঈশ্বর?
57 রুপো ও সোনায় মোড়া এই কাঠের মূর্তি চোর ও দস্যুদের এড়াতে পারে না; বলবান যে কোন মানুষ সেগুলির সোনা-রুপো চুরি করতে পারে ও সেগুলির গায়ে জড়ানো পোশাক কেড়ে নিয়ে চলে যেতে পারে, কিন্তু মূর্তি নিজেকেও রক্ষা করতে অক্ষম।
58 এজন্য এই মিথ্যা দেব-দেবীর চেয়ে এমন রাজাই শ্রেয়, যে নিজের সাহস দেখাতে পারে, কিংবা ঘরে উপযোগী একটা যন্ত্রও শ্রেয়, তা তো ক্রেতার কাছে উপকারীই হতে পারে; তেমন মিথ্যা দেব-দেবীর চেয়ে সামান্য একটা দরজাও শ্রেয়: ঘরে যা রয়েছে, দরজা তা রক্ষা করে; এমনকি, প্রাসাদে কাঠের আর একই একটা স্তম্ভও সেগুলির চেয়ে শ্রেয়।
59 সূর্য, চন্দ্র ও তারানক্ষত্র— যা উজ্জ্বল হতে ও বিশেষ বিশেষ সঙ্কল্প অনুসারে সেবা করতে নিরূপিত—তারা তো বাধ্য।
60 একই প্রকারে বিদ্যুৎ-ঝলকও, তা যখন হঠাৎ দেখা দেয়, তখন দেখতে সুন্দর; আবার, বাতাস প্রতিটি দেশের উপর দিয়েই বয়।
61 মেঘমালা ঈশ্বরের কাছ থেকে যে হুকুম পেয়েছে, তা পালন করে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে আনাগোনা করে; এবং পাহাড়পর্বত ও বন ধ্বংস করার জন্য আগুন ঊর্ধ্বলোক থেকে প্রেরিত হয়ে সেই হুকুম পালন করে।
62 কিন্তু সেই দেবমূর্তি এসব কিছুর সমকক্ষ নয়, সৌন্দর্যেও নয়, ক্ষমতায়ও নয়।
63 তাই কেউ ভাবতে ও প্রচার করতে পারে না যে, সেগুলি ঈশ্বর, যখন সেগুলি বিচার সম্পাদন করতে অক্ষম, কোন উপকারও করতে অক্ষম।
64 সুতরাং, একদা জেনে যে, সেগুলি ঈশ্বর নয়, তোমরা সেগুলিকে ভয় পেয়ো না।
65 বস্তুত সেগুলি রাজাদের অভিশাপও দেয় না, আশীর্বাদও করে না,
66 জাতিগুলির জন্য আকাশে কোন চিহ্নও দেখায় না, সূর্যের মতও দীপ্তিমান হয় না, চন্দ্রের মতও আলো ছড়ায় না।
67 সেগুলির চেয়ে পশুরাও ভাল অবস্থায় আছে, কেননা কোন একটা আশ্রয়ে পালিয়ে নিজেদের জন্য চিন্তা করতে পারে।
68 সুতরাং এমন প্রমাণের লেশমাত্র নেই যে, সেগুলি ঈশ্বর; তাই সেগুলিকে ভয় পেয়ো না।
69 সোনা-রুপোতে মোড়া তাদের সেই কাঠের মূর্তি শশাগাছের মাঠে এমন কাকতাড়ুয়ার মত—তা কিছুই রক্ষা করে না;
70 আবার, সোনা-রুপোতে মোড়া তাদের সেই কাঠের মূর্তি কাঁটাঝোপে একটা শাখার মত, যার উপরে সব রকম পাখি বসতে পারে; কিংবা সেগুলি অন্ধকারে ফেলে দেওয়া লাশের মত।
71 সেগুলির ক্ষোম-পোশাক ও শোভা জীর্ণ হয়ে যাচ্ছে দেখে তোমরা বুঝবে যে, সেগুলি ঈশ্বর নয়। শেষ পর্যায়ে সেগুলিকে গ্রাস করা হবে, এবং সেগুলি দেশের লজ্জার কারণ হবে।
72 তবে সেই ধার্মিক মানুষই শ্রেয়, যার কোন দেবমূর্তি নেই; লজ্জা তাকে কখনও স্পর্শ করবে না।'