Index

মার্ক - Chapter 8

1 আর সেসময়, যখন আবার লোকের ভিড় হল ও তাদের কাছে খাবারের মত কিছুই ছিল না, তখন তিনি নিজের শিষ্যদের কাছে ডেকে বললেন,
2 “এই লোকদের দেখে আমার মায়া লাগে, কেননা এরা আজ তিন দিন হল আমার সঙ্গে রয়েছে ও খাবারের মত এদের কিছু নেই;
3 যদি আমি এদের অনাহারে বাড়ি ফিরে পাঠাই, পথে এরা মূর্ছা পড়বে; আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ দূর থেকে এসেছে।
4 শিষ্যেরা উত্তরে তাঁকে বললেন, 'এখানে এই প্রান্তরের মধ্যে কে কোথা থেকে রুটি দিয়ে এই সকল লোকের ক্ষুধা মেটাতে পারবে?'
5 তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমাদের কাছে ক'খানা রুটি আছে?' তাঁরা বললেন, ‘সাতখানা।’
6 তখন তিনি লোকদের মাটিতে বসতে আদেশ করলেন; এবং সেই সাতখানা রুটি হাতে নিয়ে ধন্যবাদ-স্তুতি উচ্চারণ করে তা ছিঁড়লেন, ও লোকদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য তা শিষ্যদের দিলেন ; আর তাঁরা তা লোকদের মধ্যে বিতরণ করলেন।
7 তাঁদের কাছে কয়েকটা ছোট ছোট মাছও ছিল, তিনি সেগুলির উপরে ‘ধন্য’ স্তুতিবাদ উচ্চারণ করে সেগুলিও লোকদের মধ্যে বিতরণ করতে বললেন; আর তাঁরা তা লোকদের মধ্যে বিতরণ করলেন।
8 লোকে তৃপ্তির সঙ্গেই খেল; এবং যতগুলো টুকরো পড়ে রইল, তাতে তাঁরা সাতখানা ঝুড়ি তুলে নিলেন।
9 লোকদের সংখ্যা ছিল চার হাজারের মত;
10 তিনি তাদের বিদায় দিলেন; এবং তখনই শিষ্যদের সঙ্গে নৌকায় উঠে দালমানুথা অঞ্চলে গেলেন।
11 ফরিসিরা এসে তাঁর সঙ্গে তর্ক করতে লাগলেন; তাঁকে যাচাই করার জন্য তাঁর কাছে স্বর্গ থেকে কোন একটা চিহ্ন দেখবার দাবি করলেন।
12 আর তিনি আত্মায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, 'এই প্রজন্মের মানুষ কেন একটা চিহ্ন দেখবার দাবি করে? আমি আপনাদের সত্যি বলছি, এই মানুষদের কোন চিহ্ন দেখানো হবে না।'
13 আর তিনি তাঁদের ছেড়ে আবার নৌকায় উঠে ওপারে গেলেন।
14 শিষ্যেরা সঙ্গে রুটি নিতে ভুলে গেছিলেন, নৌকায় তাঁদের কাছে শুধু একখানা ছাড়া আর কোন রুটি ছিল না। তখন তিনি তাঁদের বললেন,
15 ‘সতর্ক হও, ল ফরিসিদের খামির ও হেরোদের খামিরের ব্যাপারে সাবধান থাক।'
16 তখন তাঁরা একে অপরকে বলতে লাগলেন, 'আমাদের কাছে তো রুটি নেই।'
17 তা জানতেন বিধায় তিনি তাঁদের বললেন, 'বলাবলি করে কেন বলছ, আমাদের রুটি নেই? এখনও কি বুঝতে পার না? ব্যাপারটা ধরতে পার না? তোমাদের হৃদয় কি কঠিন হয়ে গেছে?
18 চোখ থাকতে কি দেখতে পাও না? কান থাকতে কি শুনতে পাও না?
19 মনেও পড়ে না যে আমি যখন সেই পাঁচ হাজার লোকের মধ্যে পাঁচখানা রুটি ছিড়ে দিয়েছিলাম, তখন তোমরা টুকরোগুলোয় ভরা কতগুলো ডালা তুলে নিয়েছিলে?' তাঁরা বললেন, 'বারোখানা।
20 আর যখন চার হাজার লোকের মধ্যে সাতখানা রুটি ছিঁড়ে দিয়েছিলাম, তখন তোমরা টুকরোগুলোয় ভরা কতগুলো ঝুড়ি তুলে নিয়েছিলে?' তাঁরা বললেন, 'সাতখানা।
21 তিনি তাঁদের বললেন, 'তোমরা কি এখনও বুঝতে পারছ না?”
22 তাঁরা বেসাইদায় এসে পৌঁছলে লোকেরা তাঁর কাছে একজন অন্ধকে এনে তাঁকে মিনতি করল, তিনি যেন তাকে স্পর্শ করেন।
23 সেই অন্ধের হাত ধরে তিনি তাকে গ্রামের বাইরে নিয়ে গেলেন; পরে তার চোখে থুথু দিয়ে ও তার উপরে হাত রেখে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছ?”
24 সে চোখ খুলে বলল, ‘মানুষ দেখতে পাচ্ছি : দেখতে তারা এমন গাছের মত যা হেঁটে বেড়াচ্ছে।'
25 তখন তিনি তার চোখের উপরে আবার হাত রাখলেন; এবার সে ঠিকমত দেখতে পেল ও সুস্থ হয়ে উঠল—সবকিছুই স্পষ্ট ও সুক্ষ্মভাবে দেখতে পেল।
26 আর তিনি এই বলে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন, 'এই গ্রামে আদৌ প্রবেশ করো না।'
27 যিশু ও তাঁর শিষ্যেরা ফিলিপ সীজারিয়া অঞ্চলের গ্রামগুলোর দিকে রওনা হলেন। পথে চলতে চলতে তিনি নিজের শিষ্যদের কাছে এই প্রশ্ন রাখলেন, 'আমি কে, এবিষয়ে লোকে কী বলে?
28 তাঁরা তাঁকে বললেন, 'তারা বলে বাপ্তিস্মদাতা যোহন ; অন্য কেউ বলে এলিয়; আবার অন্য কেউ বলে : নবীদের কোন একজন।
29 তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু তোমরা, আমি কে, এবিষয়ে তোমরাই কী বল?' পিতর উত্তর দিয়ে তাকে বললেন, “আপনি সেই খ্রিষ্ট।'
30 তখন তিনি আজ্ঞা করলেন তাঁরা যেন তাঁর বিষয়ে কাউকে কিছুই না বলেন।
31 তখন তিনি তাঁদের একথা শেখাতে লাগলেন যে, মানবপুত্রকে বহু যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে, এবং প্রবীণদের, প্রধান যাজকদের ও শাস্ত্রীদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হতে হবে, তাঁকে নিহত হতে হবে, আর তিন দিন পরে তাঁকে পুনরুত্থান করতে হবে।
32 একথা তিনি স্পষ্টভাবেই বললেন। এতে পিতর তাঁকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুযোগ করতে লাগলেন।
33 কিন্তু তিনি ফিরে দাঁড়িয়ে নিজের শিষ্যদের দিকে তাকিয়ে পিতরকে ধমক দিলেন, বললেন, 'আমার পিছনে চলে যাও, শয়তান! কেননা যা ভাবছ, তা ঈশ্বরের নয়, মানুষেরই ভাবনা।
34 নিজের শিষ্যদের সঙ্গে তিনি লোকদেরও ডেকে বললেন, 'কেউ যদি আমার পিছনে আসতে ইচ্ছা করে, সে নিজেকে অস্বীকার করুক, ও নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার অনুসরণ করুক।
35 কেননা যে কেউ নিজের প্রাণ বাঁচাতে চায়, সে তা হারাবে, আর যে কেউ আমার জন্য ও সুসমাচারের জন্য নিজের প্রাণ হারায়, সে তা বাঁচাবে।
36 বস্তুত মানুষ যদি সমগ্র জগৎ জয় ক'রে নিজের প্রাণ হারিয়ে ফেলে, তাতে তার কী লাভ হবে?
37 কিংবা, মানুষ নিজের প্রাণের বিনিময়ে কী দিতে পারবে?
38 কেননা যে কেউ এই প্রজন্মের ব্যভিচারী ও পাপিষ্ঠ মানুষদের মধ্যে আমার ও আমার বাণীর বিষয়ে লজ্জাবোধ করে, মানবপুত্র যখন পবিত্র দূতবাহিনীর সঙ্গে নিজের পিতার গৌরবে আসবেন, তখন তার বিষয়ে লজ্জাবোধ করবেন।'