Index

মার্ক - Chapter 10

1 সেখান থেকে উঠে তিনি যুদার অঞ্চলে ও যদনের ওপারে এলেন; আর তাঁর কাছে আবার লোকের ভিড় জমতে লাগল, এবং তিনি তাঁর অভ্যাসমত আবার তাদের উপদেশ দিতে লাগলেন।
2 কয়েকজন ফরিসিরা কাছে এসে তাঁকে যাচাই করার জন্য জিজ্ঞাসা করলেন, 'পুরুষের পক্ষে কি স্ত্রীকে ত্যাগ করা বিধেয়?”
3 তিনি এই বলে তাঁদের উত্তর দিলেন, 'মোশী আপনাদের কী আদেশ দিয়েছেন?
4 তাঁরা বললেন, 'মোশী ত্যাগপত্র লিখতে ও নিজ স্ত্রীকে ত্যাগ করতে অনুমতি দিয়েছেন।"
5 যিশু তাঁদের বললেন, 'আপনাদের হৃদয় কঠিন ছিল বলেই তিনি এই বিধি লিখেছিলেন,
6 কিন্তু সৃষ্টির আদি থেকে ঈশ্বর পুরুষ ও নারী করে তাদের গড়লেন,
7 এই কারণে মানুষ পিতা ও মাতাকে ত্যাগ করে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হবে,
8 এবং সেই দু'জন একদেহ হবে; সুতরাং তারা আর দু'জন নয়, কিন্তু একদেহ।
9 অতএব ঈশ্বর যা সংযুক্ত করেছেন, মানুষ তা যেন বিযুক্ত না করে।'
10 পরে শিষ্যেরা বাড়িতে আবার সেই বিষয়ে তাঁর কাছে নানা প্রশ্ন রাখলেন।
11 তিনি তাঁদের বললেন, 'যে কেউ নিজের স্ত্রীকে ত্যাগ করে অন্য একজনকে বিবাহ করে, সে তার বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে।
12 এবং কোন স্ত্রীলোক যদি নিজের স্বামীকে ত্যাগ করে অন্য একজনকে বিবাহ করে, সেও ব্যভিচার করে।'
13 তখন কয়েকটি শিশুকে তাঁর কাছে আনা হল, যেন তিনি তাদের স্পর্শ করেন। শিষ্যেরা তাদের ভর্ৎসনা করছিলেন,
14 কিন্তু যিশু তা দেখে অসন্তুষ্ট হলেন, ও তাঁদের বললেন, 'শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও, তাদের বাধা দিয়ো না, কেননা যারা এদের মত, ঈশ্বরের রাজ্য তাদেরই।
15 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে কেউ শিশুরই মত ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, সে তার মধ্যে কখনও প্রবেশ করতে পারবে না।'
16 আর তিনি তাদের কোলে তুললেন, তাদের উপর হাত রাখলেন ও আশীর্বাদ করলেন।
17 তিনি বেরিয়ে পড়ে পথে চলতে উদ্যত হচ্ছেন, সেসময় একজন লোক ছুটে এসে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে এই প্রশ্ন রাখল, ‘মঙ্গলময় গুরু, অনন্ত জীবনের উত্তরাধিকারী হবার জন্য আমাকে কী করতে হবে?”
18 যিশু তাকে বললেন, "আমাকে মঙ্গলময় বলছ কেন? একজন ছাড়া আর মঙ্গলময় কেউ নয়, তিনি ঈশ্বর।
19 তুমি তো আজ্ঞাগুলো জান, নরহত্যা করবে না, ব্যভিচার করবে না, চুরি করবে না, মিথ্যাসাক্ষ্য দেবে না, প্রতারণা করবে না, তোমার পিতামাতাকে সম্মান করবে।”
20 লোকটি বলল, “গুরু, ছেলেবেলা থেকেই আমি এই সমস্ত পালন করে আসছি।
21 যিশু তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে তাকে ভালবাসলেন, এবং বললেন, 'তোমার একটা বিষয় বাকি আছে : যাও, তোমার যা যা আছে তা বিক্রি করে গরিবদের দাও, তাতে স্বর্গে ধন পাবে; তারপর এসো, আমার অনুসরণ কর।'
22 কিন্তু একথায় বিষণ্ণ হয়ে সে মনের দুঃখে চলে গেল, কারণ তার বিপুল সম্পত্তি ছিল।
23 তখন যিশু চারদিকে তাকিয়ে নিজ শিষ্যদের বললেন, 'যাদের ধন আছে, তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন কঠিন!
24 তাঁর কথায় শিষ্যেরা অবাক হলেন, কিন্তু যিশু তাঁদের আবার বললেন, "বৎসেরা, ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন কঠিন!
25 ধনীর পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করার চেয়ে উটের পক্ষে সুচের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে যাওয়াই বরং সহজ।'
26 তেমন কথা শুনে তাঁরা অধিক বিস্ময়বিহ্বল হলেন; তাঁরা বললেন, ‘তবে পরিত্রাণ পাওয়া কার পক্ষেই বা সাধ্য?
27 তাঁদের দিকে তাকিয়ে যিশু তাঁদের বললেন, 'তা মানুষের পক্ষে অসাধ্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে অসাধ্য নয়, কারণ ঈশ্বরের পক্ষে সবই সাধ্য।'
28 তখন পিতর তাঁকে বলতে লাগলেন, 'দেখুন, আমরা সবকিছুই ত্যাগ করে আপনার অনুসরণ করেছি।
29 যিশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এমন কেউ নেই যে আমার জন্য ও সুসমাচারের জন্য বাড়ি, কি ভাই, কি বোন, কি মাতা, কি পিতা, কি ছেলেমেয়ে, কি জমিজমা ত্যাগ করলে
30 এখন, ইহকালেই, তার একশ' গুণ পাবে না; সে বাড়ি, ভাই, বোন, মাতা, পিতা, ছেলে ও জমিজমা পাবে—নির্যাতনের সঙ্গেই এসব পাবে, আর পরকালে অনন্ত জীবন পাবে।
31 যারা সবার আগে রয়েছে, তাদের অনেকে শেষে পড়বে; এবং যারা সবার শেষে রয়েছে, তারা সবার আগে দাঁড়াবে।
32 তাঁরা পথে ছিলেন, যেরুসালেমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন : যিশু তাঁদের আগে আগেই চলছিলেন আর তাঁরা স্তম্ভিত ছিলেন; এবং যাঁরা পিছু পিছু চলছিলেন তাঁরা ভয়ে অভিভূত ছিলেন। সেই বারোজনকে আবার আড়ালে নিয়ে গিয়ে তিনি নিজের প্রতি যা কিছু শীঘ্রই ঘটবে, তা তাঁদের বলতে লাগলেন:
33 দেখ, আমরা যেরুসালেমে যাচ্ছি, আর মানবপুত্রকে প্রধান যাজকদের ও শাস্ত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে; তাঁরা তাঁকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করবেন ও বিজাতীয়দের হাতে তুলে দেবেন।
34 তারা তাঁকে বিদ্রূপ করবে, তাঁর মুখে থুথু দেবে, তাঁকে কশাঘাত করবে ও হত্যা করবে; আর তিন দিন পরে তিনি পুনরুত্থান করবেন।'
35 তখন জেবেদের দুই ছেলে, যাকোব ও যোহন, তাঁর কাছে এগিয়ে এসে বললেন, “গুরু, আমরা চাই যে, আপনার কাছে যা যাচনা করব, আপনি তা আমাদের জন্য করবেন।'
36 তিনি তাঁদের বললেন, 'তোমরা কী চাও? তোমাদের জন্য আমি কী করব?'
37 তাঁরা বললেন, 'এমনটি করুন, যেন আপনার গৌরবে আমরা একজন আপনার ডান পাশে, আর একজন বাঁ পাশে আসন পেতে পারি।'
38 যিশু তাঁদের বললেন, 'তোমরা কি যাচনা করছ, তা বোঝ না ; আমি যে পাত্রে পান করি, সেই পাত্রে তোমরা কি পান করতে পার? আর আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তিস্ম নিই, সেই বাপ্তিস্মে তোমরা কি বাপ্তিস্ম নিতে পার?
39 তাঁরা বললেন, 'পারি।” যিশু তাঁদের বললেন, 'আমি যে পাত্রে পান করি, সেই পাত্রে তোমরা অবশ্যই পান করবে; আর আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তিস্ম নিই, সেই বাপ্তিস্মে তোমরাও বাপ্তিস্ম নেবে:
40 কিন্তু কাউকে আমার ডান পাশে ও বাঁ পাশে আসন মঞ্জুর করার অধিকার আমার নেই ; তেমন আসন বরং তাদেরই হবে, যাদের জন্য তা প্রস্তুত করা হয়েছে।'
41 একথা শুনে অন্য দশজন যাকোব ও যোহনের উপর ক্ষুব্ধ হলেন।
42 কিন্তু যিশু তাঁদের কাছে ডেকে বললেন, 'তোমরা তো জান, বিজাতীয়দের মধ্যে যারা শাসক বলে গণ্য, তারা তাদের উপর প্রভুত্ব করে, এবং তাদের মধ্যে যারা বড়, তারা তাদের উপর কর্তৃত্ব চালায়।
43 তোমাদের মধ্যে তেমনটি হবে না; কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেউ বড় হতে চায়, তাকে তোমাদের সেবক হতে হবে,
44 আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ প্রধান হতে চায়, তাকে হতে হবে সকলের দাস ;
45 কারণ মানবপুত্র সেবা পেতে আসেননি, কিন্তু এসেছেন সেবা করতে, ও অনেকের মুক্তিমূল্য রূপে নিজের প্রাণ দিতে।
46 তাঁরা যেরিখোতে এসে পৌঁছলেন; তিনি যখন নিজের শিষ্যদের ও বহুলোকের সঙ্গে যেরিখো ত্যাগ করে চলে যাচ্ছিলেন, তখন তিমেয়ের ছেলে অন্ধ যিশু বার্তিমেয় পথের ধারে ভিক্ষা করছিল।
47 সে যখন শুনতে পেল, তিনি নাজারেথের যিশু, তখন চিৎকার করে বলতে লাগল, 'যিশু, দাউদসন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন।'
48 তখন অনেকে ধমক দিয়ে তাকে চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও জোরে চিৎকার করে বলতে লাগল, 'দাউদসন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন।'
49 যিশু থেমে বললেন, ‘তাকে ডাক। তাই লোকে সেই অন্ধকে ডেকে বলল, ‘সাহস কর, ওঠ, উনি তোমাকে ডাকছেন।' তখন সে চাদর ফেলে লাফ দিয়ে উঠে যিশুর কাছে গেল। যিশু তাকে বললেন, “তুমি কী চাও? আমি তোমার জন্য কী করব?” অন্ধটি তাঁকে বলল, 'রাব্বুনি, আমি যেন চোখে দেখতে পাই!'
50 যিশু তাকে বললেন, 'যাও, তোমার বিশ্বাস তোমার পরিত্রাণ সাধন করেছে। আর তখনই সে ম চোখে দেখতে পেল, ও তাঁর অনুসরণে পথ চলতে লাগল ।