1 সেখান থেকে চলে গিয়ে তিনি নিজের দেশে এলেন ও তাঁর শিষ্যেরা তাঁর অনুসরণ করলেন।
2 সাব্বাৎ দিন এলে তিনি সমাজগৃহে উপদেশ দিতে লাগলেন, আর অনেকে তাঁর কথা শুনে বিস্ময়মগ্ন হয়ে বলছিল, 'এসব কিছু কোথা থেকেই বা এর কাছে আসে? এই যে প্রজ্ঞা একে দেওয়া হয়েছে ও এর হাত দিয়ে এই যে পরাক্রম-কর্মগুলো সাধিত হয়ে থাকে, এই সব আবার কী?
3 এ কি সেই ছুতোর নয় যে মারীয়ার ছেলে, যাকোব, যোসেস, যুদা ও সিমোনের ভাই? এর বোনেরাও কি আমাদের এখানে নেই?' এতে তিনি তাদের স্খলনের কারণ ছিলেন।
4 যিশু তাদের বললেন, “নবী কেবল নিজের দেশে, নিজের আপনজন ও পরিবার-পরিজনদের মধ্যেই অসম্মানিত!
5 আর তিনি সেখানে কোন পরাক্রম-কর্ম সাধন করতে পারলেন না, কেবল কয়েকজন পীড়িত লোকের উপরে হাত রেখে তাদের নিরাময় করলেন।
6 তাদের অবিশ্বাসের জন্য তিনি আশ্চর্য হলেন।
সেই বারোজনকে প্রেরণ
তাঁদের কাছে নানা নির্দেশবাণী
তিনি চারদিকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে উপদেশ দিতেন।
7 পরে সেই বারোজনকে কাছে ডেকে তিনি দু'জন দু'জন করে তাঁদের প্রেরণ করতে শুরু করলেন ও তাঁদের অশুচি আত্মাদের উপরে অধিকার দিলেন;
8 এবং এই নির্দেশ দিলেন তাঁরা যেন পথের জন্য লাঠি ছাড়া আর কিছু না নেন : রুটিও নয়, ঝুলিও নয়, কোমরের কাপড়ে পয়সা-কড়িও নয়;
9 তবে তাঁদের পায়ে থাকবে জুতো, কিন্তু পরনের জন্য দু'টো জামা সঙ্গে নেবেন না।
10 তিনি তাঁদের আরও বললেন, 'তোমরা যে কোন স্থানে যে বাড়িতে প্রবেশ কর, সেই স্থান থেকে চলে না যাওয়া পর্যন্ত সেই বাড়িতে থাক।
11 আর যেখানে লোকে তোমাদের গ্রহণ না করে ও তোমাদের কথাও না শোনে, সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময়ে তাদের উদ্দেশে সাক্ষ্যস্বরূপ তোমরা পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেল।'
12 তাই তাঁরা রওনা হয়ে এমন কথা প্রচার করছিলেন যেন লোকে মনপরিবর্তন করে।
13 আর তাঁরা বহু অপদূত তাড়াতেন ও অনেক পীড়িত লোককে তেল মাখিয়ে নিরাময় করতেন।
14 হেরোদ রাজা তাঁর কথা শুনতে পেয়েছিলেন, কারণ তাঁর নামের খ্যাতি তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। কেউ কেউ বলছিল, 'বাপ্তিস্মদাতা সেই যোহন মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন আর এজন্য পরাক্রম-কর্ম সাধন করার শক্তি তাঁর মধ্যে সক্রিয়।”
15 কেউ বলছিল, 'উনি এলিয়', আবার কেউ বলছিল, "উনি একজন নবী, নবীদের মধ্যে কোন একজনের মত।
16 কিন্তু হেরোদ একথা শুনে বললেন, 'যাঁর শিরশ্ছেদ করেছি, সেই যোহনই পুনরুত্থান করেছেন।
17 বস্তুতপক্ষে হেরোদ নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার কারণে নিজেই যোহনকে গ্রেপ্তার করিয়ে কারারুদ্ধ করেছিলেন, কেননা তিনি সেই হেরোদিয়াকে বিবাহ করেছিলেন।
18 কারণ যোহন হেরোদকে বলেছিলেন, 'ভাইয়ের স্ত্রীকে রাখা আপনার বিধেয় নয়।
19 তাই যোহনের উপর হেরোদিয়ার একটা আক্রোশ ছিল ও তাঁকে হত্যা করতেও চাচ্ছিল, কিন্তু পেরে উঠছিল না,
20 কারণ হেরোদ যোহনকে ধার্মিক ও পবিত্র মানুষ জেনে তাঁকে ভয় করছিলেন ও তাঁর উপর নজর রাখছিলেন। তাঁর মুখের কথা শুনে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন হতেন, তবু তাঁর কথা শুনতে ভালবাসতেন।
21 কিন্তু এমন সুবিধার দিন এসে গেল, যখন হেরোদ নিজের জন্মদিনে নিজের যত পদস্থ সভাসদ, সহস্রপতি ও গালিলেয়ার গণ্যমান্য লোকদের জন্য এক ভোজসভার আয়োজন করলেন;
22 তখন হেরোদিয়ার মেয়ে ভিতরে এসে নাচ দেখিয়ে হেরোদকে ও তাঁর অতিথিদের পুলকিত করল। তাই রাজা মেয়েটিকে বললেন, 'তোমার যা ইচ্ছা আমার কাছে যাচনা কর, তোমাকে তা-ই দেব।'
23 এবং তিনি শপথ করে তাকে বললেন, ‘অর্ধেক রাজ্য পর্যন্তও হোক, তুমি যা যাচনা করবে, তা তোমাকে দেব।' সে বাইরে গিয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করল, 'কী যাচনা করব?’
24 সে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা সেই যোহনের মাথা।”
25 সে তখনই রাজার কাছে শীঘ্রই ফিরে এসে নিজের যাচনা নিবেদন করল; বলল, 'আমার ইচ্ছা, আপনি এখনই বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথা থালায় করে আমাকে দিন।
26 এতে রাজা মনঃক্ষুণ্ণ হলেন, কিন্তু নিজের শপথের জোরে এবং উপস্থিত অতিথিদের কারণে তাকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন না।
27 রাজা তখনই একজন সৈন্যকে পাঠিয়ে যোহনের মাথা আনতে আদেশ করলেন; সে গিয়ে কারাগারে তাঁর শিরশ্ছেদ করল,
28 আর তাঁর মাথাটা একটা থালায় করে এনে মেয়েটিকে দিল, আর মেয়েটি মাকে দিল।
29 এই সংবাদ পেয়ে তাঁর শিষ্যেরা এসে তাঁর দেহটিকে নিয়ে গিয়ে একটা সমাধিমন্দিরে রাখল।
30 প্রেরিতদূতেরা যিশুর কাছে ফিরে এসে সমবেত হলেন: তাঁরা যা কিছু করেছিলেন ও শিখিয়েছিলেন তা সবই তাঁকে জানালেন।
31 তিনি তাঁদের বললেন, একাকী হয়ে থাকবার জন্য তোমরা নির্জন এক স্থানে এসে কিছুকালের মত বিশ্রাম কর।' কারণ এত লোক আসা-যাওয়া করছিল যে, তাঁরা খাওয়ার সময় পর্যন্ত পাচ্ছিলেন না।
32 তাই তাঁরা নৌকায় করে একটা নির্জন স্থানে রওনা হলেন যেখানে একাকী হয়ে থাকতে পারেন,
33 কিন্তু লোকেরা তাঁদের যেতে দেখল, ও অনেকে তাঁদের চিনতেও পারল, এবং হাঁটা পথে নানা শহর থেকে সেখানে ছুটে তাঁদের আগে এসে পৌঁছল।
34 তাই তিনি যখন নৌকা থেকে নেমে এলেন, তখন বিপুল এক জনতাকে দেখলেন; তাদের প্রতি তিনি দয়ায় বিগলিত হলেন, কেননা তারা পালকবিহীন মেষপালের মত ছিল; তিনি অনেক বিষয়ে তাদের উপদেশ দিতে লাগলেন।
35 পরে, বেশ বেলা হয়েছিল বিধায় শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে বললেন, “জায়গাটা নির্জন, বেলাও অনেক হয়েছে;
36 এদের বিদায় দিন, যেন এরা পল্লিতে পল্লিতে ও গ্রামে গ্রামে দিয়ে নিজেদের জন্য খাবার মত কিছু কিনতে পারে।
37 উত্তরে তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরাই এদের খেতে দাও।' তাঁরা তাঁকে বললেন, 'আমরা গিয়ে কি দু'শো রুপোর টাকার রুটি কিনে নিয়ে এদের খেতে দেব?”
38 তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমাদের কাছে ক'খানা রুটি আছে? গিয়ে দেখ।” তাঁরা জেনে নিয়ে বললেন, 'পাঁচখানা রুটি ও দু'টো মাছ।
39 তখন তিনি সকলকে সবুজ ঘাসের উপরে দলে দলে বসিয়ে দিতে আদেশ করলেন।
40 তারা শত শতজন ও পঞ্চাশ পঞ্চাশজন করে সারি সারি বসে গেল।
41 আর তিনি সেই পাঁচখানা রুটি ও দু'টো মাছ হাতে নিয়ে স্বর্গের দিকে চোখ তুলে 'ধন্য' স্তুতিবাদ উচ্চারণ করলেন, এবং সেই ক'খানা রুটি ছিঁড়ে লোকদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য তা শিষ্যদের দিলেন; সেই দু'টো মাছও সকলকে ভাগ করে দিলেন।
42 সকলে তৃপ্তির সঙ্গেই খেল ;
43 আর তাঁরা বারোখানা ঝুড়ি ভরা টুকরো রুটি আর কিছু মাছও কুঁড়িয়ে নিলেন।
44 যারা সেই রুটি খেয়েছিল, তারা ছিল পাঁচ হাজার পুরুষ।
45 আর যিশু তখনই শিষ্যদের নির্দেশ দিলেন যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে আগে ওপারে বোইদায় যান; এর মধ্যে তিনি লোকদের বিদায় করে দেবেন।
46 লোকদের বিদায় দেবার পর তিনি প্রার্থনা করার জন্য পর্বতে গিয়ে উঠলেন।
47 সন্ধ্যা হলে নৌকাটা গভীর সমুদ্রে ছিল, আর তিনি স্থলে একাই ছিলেন।
48 বাতাস প্রতিকূল হওয়ায় তাঁরা নৌকা বাইতে বাইতে কষ্ট পাচ্ছেন দেখে, তিনি রাত যখন আনুমানিক চার প্রহর, তখন সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে এলেন, ও । তাঁদের ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
49 তাঁকে সমুদ্রের উপর দিয়ে হাঁটতে দেখে তাঁরা ভাবছিলেন, 'এ যে ভূত! এবং চিৎকার করতে লাগলেন;
50 কারণ সকলেই তাঁকে দেখে আতঙ্কিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তখনই তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন, বললেন: 'সাহস ধর, আমিই আছি, ভয় করো না।
51 আর তিনি নৌকায় উঠলেই বাতাস পড়ে গেল; তাতে তাঁরা একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।
52 কেননা রুটির ব্যাপারটা তাঁরা বুঝতে পারেননি; হ্যাঁ, তাঁদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়েছিল।
53 পার হয়ে তাঁরা গেন্নেসারেতের তীরে এসে ভিড়লেন।
54 নৌকা থেকে নেমে এলে লোকেরা তখনই তাঁকে চিনতে পেরে
55 আশেপাশের গোটা অঞ্চল জুড়ে ছুটতে লাগল, আর যিশু যেইখানে আছেন বলে শুনতে পাচ্ছিল, সেইখানে পীড়িত লোকদের বিছানায় করে নিয়ে আসতে লাগল।
56 আর গ্রামে বা শহরে বা পল্লিতে যে কোন স্থানে তিনি প্রবেশ করতেন, তারা সেখানে, খোলা জায়গায়, পীড়িতদের শুইয়ে রাখত; এবং তাঁকে তারা মিনতি করত, যেন পীড়িতেরা তাঁর পোশাকের ধারটুকুই কমপক্ষে স্পর্শ করতে পারে; আর যত লোক তা স্পর্শ করত, তারা সকলে পরিত্রাণ পেত।