1 তারপর যিশু গালিলেয়ায় ঘোরাফেরা করতে লাগলেন। ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করছিল বিধায় তিনি দেয়ায় চলাফেরা করতে চাচ্ছিলেন না।
2 ইহুদীদের পর্ণকুটির-পর্ব সন্নিকট ছিল ;
3 তাই তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে বললেন, এখান থেকে রওনা হয়ে তুমি বরং যুদেয়ায় চলে যাও, তুমি যে সমস্ত কাজ সাধন করছ, তোমার সেই শিষ্যেরাও যেন তা দেখতে পায়।
4 কেউ তো গোপনে কাজ করে না, সে যদি স্পষ্টই প্রকাশ পেতে ইচ্ছা করে। তুমি যখন এই সমস্ত কাজ করে থাক, জগতের সামনেই নিজেকে প্রকাশ কর।'
5 আসলে তাঁর ভাইয়েরাও তাঁর প্রতি কোন বিশ্বাস রাখছিলেন না।
6 যিশু তাঁদের বললেন, “আমার সময় এখনও আসেনি, কিন্তু তোমাদের সময় সর্বদাই উপস্থিত। ?
7 জগৎ তোমাদের ঘৃণা করতে পারে না, কিন্তু আমার প্রতি তার ঘৃণা আছে, কারণ আমি তার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিয়ে থাকি যে, তার কর্ম অসৎ।
8 তোমরাই পর্বের উৎসবে যাও, আমি এই পর্বে যাচ্ছি না, কারণ আমার সময় এখনও পূর্ণ হয়নি।'
9 তাঁদের এই কথা বলে তিনি গালিলেয়ায় থেকে গেলেন।
10 কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা পর্বে চলে যাওয়ার পর তিনিও তখন—প্রকাশ্যে নয়, গোপনেই – সেখানে গেলেন।
11 পর্বের সময়ে ইহুদীরা তাকে খুঁজতে খুঁজতে বলছিল, 'সে কোথায় ?
12 আর লোকদের মধ্যে তাঁর বিষয়ে ফিস ফিস করে অনেক কথা বলাবলি হচ্ছিল : কেউ কেউ বলছিল, “তিনি সৎ লোক' ; আবার কেউ কেউ বলছিল, “তা নয়; সে লোকদের ভ্রষ্ট করে।'
13 কিন্তু ইহুদীদের ভয়ে কেউ তাঁর সম্বন্ধে প্রকাশ্যে কথা বলত না।
14 পর্বকালের মাঝামাঝি সময়ে যিশু মন্দিরে গিয়ে উপদেশ দিতে লাগলেন।
15 ইহুদীরা আশ্চর্য হয়ে বলছিল, 'শিক্ষা-দীক্ষা না পেয়ে লোকটা কী করে শাস্ত্র বিষয়ে এত বিজ্ঞ?'
16 উত্তরে যিশু বললেন, 'আমি যে শিক্ষা দিচ্ছি, তা আমার নয়; যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁরই।
17 কেউ তাঁর ইচ্ছা পালন করতে ইচ্ছুক হলে, তবে সে জানতে পারবে, এই শিক্ষা ঈশ্বর থেকে এসেছে নাকি আমি নিজে থেকে কথা বলি।
18 যে নিজে থেকে কথা বলে, সে নিজের গৌরবের অন্বেষণ করে; কিন্তু তাকে যিনি পাঠিয়েছেন, তাঁরই গৌরবের যে অন্বেষণ করে, সে সত্যাশ্রয়ী, তার মধ্যে মিথ্যা নেই।
19 মোশী কি তোমাদের বিধান দিয়ে যাননি? অথচ তোমরা কেউই সেই বিধান পালন কর না। কেন আমাকে হত্যা করতে চেষ্টা করছ?'
20 সমবেত লোকেরা উত্তর দিল, 'আপনাকে একটা অপদূতে পেয়েছে! আপনাকে হত্যা করতে কে চেষ্টা করছে?'
21 উত্তরে যিশু তাদের বললেন, 'আমি একটা কাজ করেছিলাম, আর তোমরা সকলে আশ্চর্য হচ্ছ।
22 মোশণী পরিচ্ছেদন • করার নির্দেশ দিয়েছেন— অবশ্য এই প্রথার উৎপত্তি মোশীর কাছ থেকে নয়, পিতৃপুরুষদেরই কাছ থেকে—আর তোমরা সাব্বাহ দিনেও মানুষকে পরিচ্ছেদিত করে থাক।
23 মোশীর বিধান যেন লঙ্ঘন না হয়, তার জন্য মানুষ যদি সাব্বা দিনেও পরিচ্ছেদিত হয়, তবে আমি যে সাব্বাৎ দিনে একটি মানুষকে সর্বাঙ্গীণ সুস্থ করে তুলেছি, তাতে আমার উপর তোমাদের এত ক্ষোভ কেন?
24 বাইরের চেহারা দেখে বিচার না করে তোমরা বরং ন্যায় অনুসারেই বিচার কর!”
25 তখন যেরুসালেমের কয়েকজন লোক বলতে লাগল, এ কি সেই লোক নয়,
26 যাকে তারা হত্যা করতে চেষ্টা করছে? 'দেখ, সে প্রকাশ্যেই কথা বলছে, আর তারা একে কিছুই বলছে না। তবে এ যে সেই খ্রিষ্ট, সমাজনেতারা কি সত্যিই তা জানতে পেরেছেন?
27 কিন্তু এ যে কোথা থেকে এসেছে, আমরা তা জানি; আর খ্রিষ্ট যখন আবির্ভূত হবেন, তখন কেউ জানতে পারবে না, তিনি কোথা থেকে আসেন।”
28 তাই যিশু মন্দিরে উপদেশ দিতে দিতে জোর গলায় বলে উঠলেন, 'তোমরা আমাকে জান বটে, আর আমি যে কোথা থেকে এসেছি, তাও জান। কিন্তু আমি নিজে থেকে আসিনি, বরং সত্যকার যিনি, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন : তাঁকেই তোমরা জান না।
29 কিন্তু আমি তাঁকে জানি, যেহেতু আমি তাঁরই কাছ থেকে আগত আর তিনিই আমাকে প্রেরণ করেছেন।
30 তারা তখন তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা করল, কিন্তু কেউ তাঁর গায়ে হাত দিল না, কারণ তাঁর ক্ষণ তখনও উপস্থিত হয়নি।
31 তথাপি ভিড় করা লোকদের মধ্যে অনেকেই তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখল ; তারা বলছিল, ‘ইনি যে সমস্ত চিহ্নকর্ম সাধন করেছেন, খ্রিষ্ট যখন আসবেন, তখন তিনি কি তার চেয়ে বেশিই করবেন ?
32 ফরিসিরা তাঁর সম্বন্ধে লোকদের এই সমস্ত বলাবলি শুনতে পেলেন, তাই প্রধান যাজকেরা ও ফরিসিরা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে এক দল প্রহরীকে পাঠালেন।
33 তখন যিশু বললেন, 'আমি কিছুকাল তোমাদের সঙ্গে আছি, পরে যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁর কাছে ফিরে যাব।
34 তোমরা আমাকে খুঁজবে, কিন্তু আমার সন্ধান পাবে না ; আমি যেখানে আছি, সেখানে তোমরা আসতে পার না।'
35 তখন ইহুদীরা নিজেদের মধ্যে বলতে লাগল, 'সে এমন কোথায় যাবার অভিপ্রায় করছে যে, আমরা তাঁকে খুঁজে পাব না? সে কি গ্রীকদের মধ্যে সেই প্রবাসী ইহুদীদের কাছে গিয়ে গ্রীকদের ধর্মশিক্ষা দিতে চায়?
36 তোমরা আমাকে খুঁজবে, কিন্তু আমার সন্ধান পাবে না—এই যে কথা সে বলল, তার অর্থ কী?”
37 পর্বের শেষ দিনে, অর্থাৎ উৎসবের প্রধান দিনে, যিশু দাঁড়িয়ে উচ্চ কণ্ঠে বলে উঠলেন, 'কেউ যদি তৃষ্ণার্ত হয়, সে আমার কাছে এসে পান করুক;
38 যে আমার প্রতি বিশ্বাসী—শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে—জীবনময় জলের নদনদী তার অন্তর থেকে প্রবাহিত হবে।
39 তিনি আত্মা সম্বন্ধেই একথা বলেছিলেন, সেই যে আত্মাকে তাঁর প্রতি বিশ্বাসী মানুষদের পাবার কথা; কারণ আত্মাকে তখনও দেওয়া হয়নি, যেহেতু যিশু তখনও গৌরবান্বিত হননি।
40 এই সকল কথা শুনে ভিড়ের মধ্যে কেউ কেউ বলতে লাগল, 'ইনি সত্যিই সেই নবী!
41 কেউ কেউ আবার বলল, 'ইনিই সেই খ্রিষ্ট।' কিন্তু কেউ কেউ বলল, “তবে খ্রিস্ট কি গালিলেয়া থেকে আসবেন ?
42 শাস্ত্রে কি একথা নেই যে, খ্রিস্ট দাউদের বংশধর ; এবং দাউদের আদি বাসস্থান সেই বেথলেহেম গ্রাম থেকেই তিনি আসবেন?
43 এভাবে ভিড়ের মধ্যে তাঁর কথা নিয়ে মতভেদ দেখা দিল।
44 তাদের কয়েকজন তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চাইল, কিন্তু কেউই তাঁর গায়ে হাত দিল না।
45 তখন সেই প্রহরীরা প্রধান যাজকদের ও ফরিসিদের কাছে ফিরে গেল ; তাঁরা ওদের বললেন, 'তোমরা তাকে আননি কেন?
46 তারা উত্তর দিল, “উনি যেভাবে কথা বলেন, কোনও মানুষ কখনও সেভাবে কথা বলেনি।'
47 তাতে হয়েছে নাকি? ফরিসিরা তাদের বললেন, 'তোমাদেরও ভ্রষ্ট করা হয়েছে
48 সমাজনেতাদের মধ্যে কিংবা ফরিসিদের মধ্যে কেউ কি তাঁকে বিশ্বাস করেছেন?
49 সেই সাধারণ লোকেরা কিন্তু, যারা বিধান জানে না, তারা তো অভিশপ্ত !
50 নিকোদেম, যিনি আগে তাঁর কাছে এসেছিলেন ও তাঁদের একজন ছিলেন, তাঁদের বললেন,
51 কারও বক্তব্য আগে না শুনে ও সে যে কী করে, তা না জেনে নিয়ে, আমাদের বিধান কি কোনও মানুষের বিচার করে?”
52 তাঁরা এই বলে তাঁকে উত্তর দিলেন, 'আপনিও কি গালিলেয়ার মানুষ নাকি? অনুসন্ধান করুন! দেখবেন, গালিলেয়া থেকে কোন নবীর আবির্ভূত হওয়ার কথা নয়।”
53 তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেল,