1 এরপর ইহুদীদের এক পর্বের সময় এল, আর যিশু যেরুসালেমে গেলেন।
2 যেরুসালেমে মেষ-জলকুণ্ডের কাছাকাছি একটা জলকুণ্ড আছে, হিব্রু ভাষায় যার নাম বোথা; তার পাঁচটা চাতাল আছে।
3 4 5 সেখানে একজন লোক ছিল যে আটত্রিশ বছর ধরে রোগে ভুগছিল।
4
5
6 যখন যিশু তাকে সেখানে শুয়ে থাকতে দেখলেন ও তার সেই বহুদিনের অসুখের কথা জানতে পারলেন, তখন তাকে বললেন, 'তুমি কি সুস্থ হতে চাও?'
7 রোগী উত্তরে তাঁকে বলল, 'প্রভু, আমার এমন কেউ নেই যে, জল কেঁপে উঠলেই আমাকে কুণ্ডে নামায়। আমি যেতে যেতেই অন্য কেউ আমার আগে নেমে পড়ে।
8 যিশু তাঁকে বললেন, ‘উত্থিত হও, তোমার মাদুর তুলে নাও আর হেঁটে চল।'
9 লোকটি তখনই সুস্থ হয়ে উঠল, ও মাদুর তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগল ।
10 তাই যাকে নিরাময় করা হয়েছিল, তাকে ইহুদীরা বললেন, 'আজ সাব্বাৎ দিন, মাদুর তোলা তোমার পক্ষে বিধেয় নয়।
11 কিন্তু সে তাদের উত্তর দিল, 'যিনি আমাকে সুস্থ করেছেন, তিনিই আমাকে বলেছেন, তোমার মাদুর তুলে নাও আর হেঁটে চল।'
12 তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'যে তোমাকে বলেছে, মাদুর তুলে নাও আর হেঁটে চল, সেই লোকটা কে?'
13 কিন্তু যে সুস্থ হয়েছিল, সে জানত না, তিনি কে, কারণ সেই জায়গায় অনেক ভিড় থাকায় যিশু সরে গেছিলেন।
14 কিছুক্ষণ পরে যিশু মন্দিরে তার দেখা পেয়ে তাকে বললেন, “দেখ, তুমি সুস্থ হয়েছ; আর পাপ করো না, পাছে তোমার আরও খারাপ কিছু ঘটে।
15 লোকটি গিয়ে ইহুদীদের জানাল, যিশুই তাকে সুস্থ করেছেন।
16 এজন্যই ইহুদীরা যিশুকে নিপীড়ন করতে লাগলেন, কেননা তিনি সাব্বাৎ দিনে এই সমস্ত করছিলেন।
17 যিশু প্রত্যুত্তরে তাঁদের বললেন, 'আমার পিতা এখনও কাজে রত আছেন, আর আমিও কাজে রত আছি।'
18 এজন্যই ইহুদীরা আরও প্রবল ভাবে তাঁকে হত্যা করতে চেষ্টা করলেন, কারণ তিনি যে সাব্বাৎ দিন লঙ্ঘন করতেন, তা শুধু নয়, কিন্তু ঈশ্বরকে নিজের পিতা বলতেন ও নিজেকেই ঈশ্বরের সমান করতেন।
19 যিশু এই বলে তাঁদের উত্তর দিলেন, “আমি আপনাদের সত্যি সত্যি বলছি, নিজে থেকে পুত্র কোন কিছুই করতে পারেন না; তিনি পিতাকে যা করতে দেখেন, তা-ই মাত্র করেন; কারণ তিনি যা কিছু করেন, পুত্রও তেমনি তা-ই করেন।
20 কেননা পিতা পুত্রকে ভালবাসেন, ও নিজে যা কিছু করেন, তা সমস্তই তাঁকে দেখান, এবং এর চেয়ে মহত্তর কাজও তাকে দেখাবেন, যেন আপনারা আশ্চর্য হন।
21 পিতা যেমন মৃতদের পুনরুত্থিত করে তাদের জীবন দান করেন, তেমনি পুত্র যাকে ইচ্ছা করেন তাকেই জীবন দান করেন।
22 কারণ পিতা নিজে কারও বিচার না করে সমস্ত বিচারের ভার পুত্রের হাতে ন্যস্ত করেছেন,
23 যেন সকলে যেমন পিতাকে সম্মান দিয়ে থাকে, তেমনি পুত্রকেও সম্মান করে। পুত্রকে যে সম্মান করে না, যিনি পুত্রকে পাঠিয়েছেন, সে সেই পিতাকেও সম্মান করে না।
24 আমি আপনাদের সত্যি সত্যি বলছি, যে আমার বাণী শোনে, ও যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পেয়ে গেছে, সে বিচারের সম্মুখীন হয় না, বরং সে মৃত্যু থেকে জীবনেই উত্তীর্ণ হয়েছে।
25 আমি আপনাদের সত্যি সত্যি বলছি, সেই ক্ষণ আসছে, এমনকি তা এখনই উপস্থিত, যখন মৃতেরা ঈশ্বরপুত্রের কন্ঠস্বর শুনবে, এবং যারা তা শুনবে তারা জীবিত হবে।
26 কেননা পিতার যেমন নিজের মধ্যে জীবন আছে, তেমনি তিনি পুত্রকেও নিজের মধ্যে জীবন রাখতে দিয়েছেন;
27 এবং তিনি তাঁকে বিচার করার অধিকার দিয়েছেন, কারণ তিনি মানবপুত্র !
28 এতে আপনারা আশ্চর্য হবেন না, কারণ সেই ক্ষণ আসছে, যখন যারা সমাধিতে রয়েছে, তারা সকলে তাঁর কণ্ঠস্বর শুনে কবর থেকে বের হবে:
29 যারা সৎকর্ম করেছে, তাদের পুনরুত্থান হবে জীবনের উদ্দেশে, কিন্তু যারা অসৎ কর্ম করেছে, তাদের পুনরুত্থান হবে বিচারের উদ্দেশে।
30 নিজে থেকে আমি কিছুই করতে পারি না : আমি যেমন শুনি তেমনি বিচারও করি, আর আমার বিচার ন্যায্য, কারণ আমি নিজের ইচ্ছা নয়, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁরই ইচ্ছা পূর্ণ করতে চেষ্টা করি।
31 নিজের বিষয়ে আমি যদি নিজে সাক্ষ্য দিই, তবে আমার সাক্ষ্য যথার্থ নয়।
32 অন্য একজনই আছেন, যিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, আর আমি জানি : আমার বিষয়ে তিনি যে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, সেই সাক্ষ্য যথার্থ।
33 আপনারা যোহনের কাছে লোক পাঠিয়েছিলেন, আর তিনি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন।
34 আমি যে মানুষেরই সাক্ষ্যদানের উপর নির্ভর করি এমন নয়, কিন্তু এই সমস্ত কথা বলি যেন আপনারা পরিত্রাণ পেতে পারেন।
35 তিনি ছিলেন এক জ্বলন্ত ও দীপ্তিমান প্রদীপ ; আর তাঁর আলোতে আপনারা কেবল কিছুক্ষণ ধরেই উল্লাস করতে চেয়েছেন।
36 কিন্তু যোহনের সাক্ষ্যদানের চেয়ে আমার মহত্তর সাক্ষ্যদান রয়েছে : যে কাজ সম্পাদনের ভার পিতা আমার হাতে ন্যস্ত করেছেন, আমার দ্বারা সাধিত এই সমস্ত কাজই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, পিতাই আমাকে প্রেরণ করেছেন।
37 তাছাড়া, পিতা নিজে, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্যদান করছেন; তাঁর কণ্ঠস্বর আপনারা কখনও শোনেননি, তাঁর চেহারাও কখনও দেখেননি,
38 তাঁর বাণীও আপনাদের অন্তরে স্থান পাচ্ছে না, কারণ তিনি যাঁকে প্রেরণ করেছেন, তাঁকে আপনারা বিশ্বাস করেন না।
39 আপনারা তো তন্ন তন্ন করে শাস্ত্রের অনুসন্ধান করে থাকেন, কারণ মনে করছেন, তার মধ্যেই অনন্ত জীবন পাবেন, কিন্তু এই সমস্ত শাস্ত্র আমারই বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে,
40 অথচ আপনারা জীবন পাবার জন্য আমার কাছে আসতে সম্মত নন।
41 মানুষের প্রশংসা আমি গ্রাহ্য করি না :
42 তাছাড়া আপনাদের জানি : আপনাদের অন্তরে ঈশ্বর-প্রেম নেই।
43 আমি আমার পিতার নামে এসেছি, তবু আপনারা আমাকে গ্রহণ করতে সম্মত নন; অন্য কেউ নিজের নামে এলে তাকেই বরং গ্রহণ করবেন।
44 আপনারা কেমন করেই বা বিশ্বাস করতে পারেন, যখন পরস্পরের প্রশংসাই গ্রাহ্য ক'রে অনন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে যে প্রশংসা আসে, তার অন্বেষণ করেন না ?
45 মনে করবেন না যে, পিতার কাছে আমি আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনব; বরং যাঁর উপরে আপনারা আশা রেখে আসছেন, সেই মোশী নিজেই আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন।
46 কারণ আপনারা যদি মোশীকে বিশ্বাস করতেন, তবে আমাকেও বিশ্বাস করতেন, যেহেতু তিনি আমারই বিষয়ে লিখেছিলেন।
47 কিন্তু তিনি যা লিখলেন, তা যদি আপনারা বিশ্বাস না করেন, তবে আমি যা বলছি, আপনারা কেমন করে তা বিশ্বাস করবেন?"