1 এর পর যিশু গালিলেয়া-সাগরের, অর্থাৎ তিবেরিয়াস-সাগরের ওপারে গেলেন।
2 রোগীদের সুস্থ করে তুলে তিনি যে সমস্ত চিহ্নকর্ম সাধন করেছিলেন, তা দেখেছিল বিধায় বহু লোক তাঁর অনুসরণ করছিল।
3 কিন্তু যিশু পর্বতে উঠলেন আর সেখানে নিজ শিষ্যদের সঙ্গে বসলেন।
4 ইহুদীদের পাস্কাপর্ব সন্নিকট ছিল।
5 চোখ তুলে যিশু যখন দেখতে পেলেন অনেক লোক তাঁর দিকে আসছে, তখন ফিলিপকে বললেন, 'এই সমস্ত লোকদের খেতে দেবার জন্য আমরা কোথা থেকে রুটি কিনতে পারব?'
6 তাঁকে পরীক্ষা করার জন্যই তিনি একথা বলেছিলেন, তিনি তো জানতেন, তিনি কী করতে যাচ্ছিলেন।
7 ফিলিপ তাঁকে উত্তর দিলেন, 'এদের প্রত্যেককে সামান্য কিছু দিতে হলে দু'শো রুপোর টাকার রুটিতেও কুলোবে না।'
8 তাঁর শিষ্যদের একজন, সিমোন পিতরের ভাই আন্দ্রিয়, তাঁকে বললেন,
9 “এখানে একটি ছেলে আছে, তার কাছে পাঁচখানা যবের রুটি ও দু'টো মাছ আছে; কিন্তু তাতে এত লোকের কী হবে?'
10 যিশু বললেন, 'এদের বসিয়ে দাও।' সেখানে প্রচুর ঘাস ছিল। লোকেরা বসে পড়ল, পুরুষদের সংখ্যা ছিল আনুমানিক পাঁচ হাজার।
11 তখন যিশু সেই রুটি ক'খানা নিলেন, ও ধন্যবাদ-স্তুতি উচ্চারণ করে, যারা সেখানে বসে ছিল, তাদের মধ্যে তা বিতরণ করলেন; মাছ নিয়েও তা-ই করলেন—সকলে যতখানি চাইল, ততখানি দিলেন।
12 সবাই তৃপ্ত হলে তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, ‘পড়ে থাকা টুকরোগুলো জড় কর, কিছুই যেন নষ্ট না হয়।'
13 তাই তাঁরা তা জড় করলেন, এবং সকলে খাওয়ার পরেও সেই পাঁচখানা যবের রুটি থেকে পড়ে থাকা টুকরোগুলোতে তাঁরা বারোখানা ঝুড়ি ভর্তি করলেন।
14 যিশুর সাধিত এই চিহ্নকর্ম দেখে লোকেরা বলতে লাগল, 'ইনি সত্যিই সেই নবী, জগতে যিনি আসছেন।'
15 যিশু যখন বুঝতে পারলেন যে, তারা তাঁকে রাজা করার অভিপ্রায়ে জোর করে ধরতে আসছে, তখন একা আবার পর্বতে সরে গেলেন।
16 সন্ধ্যা হলে তাঁর শিষ্যেরা সাগর-তীরে নেমে গেলেন;
17 এবং নৌকায় উঠে সাগরের ওপারের দিকে, কাফার্নাউমের দিকে, রওনা হলেন।
18 ইতিমধ্যে অন্ধকার নেমে এসেছিল, আর যিশু তখনও তাঁদের কাছে আসেননি। প্রবল বাতাস বয়ে যাওয়ায় সাগর ফুলে উঠছিল।
19 তাঁরা চার-পাঁচ কিলোমিটার বেয়ে এসেছিলেন, এমন সময়ে দেখলেন, যিশু সাগরের উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন, নৌকার দিকেই আসছেন।
20 তাঁরা ভয় পেলেন, কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, “আমিই আছি! ভয় করো না।”
21 তাই তাঁরা তাঁকে নৌকায় তুলে নিতে চাইলেন, আর নৌকাটা তখনই গন্তব্য স্থানে এসে ভিড়ল।
22 পরদিন যে সমস্ত লোক তখনও সাগরের ওপারে থেকে গেছিল, তারা দেখল যে, একটামাত্র নৌকা সেখানে রয়ে গেছিল, এবং যিশু সেই নৌকায় তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে ওঠেননি, কেবল শিষ্যেরাই গিয়েছিলেন।
23 যেখানে প্রভু ধন্যবাদ-স্তুতি উচ্চারণ করার পর লোকে রুটি খেয়েছিল, সেই জায়গার কাছে তখন অন্য কতগুলো নৌকা তিবেরিয়াস থেকে এসেছিল।
24 যিশু কিংবা তাঁর শিষ্যেরা সেখানে আর কেউই ছিলেন না, লোকে তা বুঝতে পেরে সেই সব নৌকায় উঠে যিশুর অনুসন্ধানে কাফার্নাউমে চলল।
25 তাঁকে সাগরের ওপারে খুঁজে পেয়ে তারা তাঁকে বলল, 'রাব্বি, এখানে করে এলেন?”
26 যিশু তাদের উত্তর দিয়ে বললেন, 'আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, তোমরা চিহ্নগুলো দেখেছ বলেই যে আমাকে খুঁজছ তা নয়, সেই রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়েছ বলেই আমাকে খুঁজছ।
27 নশ্বর খাদ্যের জন্য কাজ করো না, বরং সেই খাদ্যেরই জন্য কাজ কর, যা অনন্ত জীবনের উদ্দেশে থেকে যায়, যা মানবপুত্রই তোমাদের দান করবেন; কারণ পিতা ঈশ্বর তাঁকেই নিজের মুদ্রাঙ্কনে চিহ্নিত করেছেন।
28 তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, 'আমরা যেন ঈশ্বরের কাজ করতে পারি, তবে আমাদের কী করতে হবে?”
29 যিশু তাদের এই উত্তর দিলেন, ‘তিনি যাকে প্রেরণ করেছেন তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখা, এটিই ঈশ্বরের কাজ।'
30 তাই তারা তাঁকে বলল, 'আপনি এমন কী চিহ্নকর্ম সাধন করতে যাচ্ছেন, যেন তা দেখতে পেয়ে আমরা আপনাকে বিশ্বাস করি? আপনি কী কাজ সাধন করতে যাচ্ছেন?
31 আমাদের পিতৃপুরুষেরা মরুপ্রান্তরে মান্না খেয়েছিলেন, যেমনটি লেখা আছে, তিনি স্বর্গ থেকে রুটি তাদের খেতে দিলেন।
32 যিশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি : মোশীই যে স্বর্গ থেকে রুটি তোমাদের দান করেছেন তা নয়, আমার পিতাই স্বর্গ থেকে সত্যকার রুটি তোমাদের দান করছেন :
33 কারণ যে রুটি স্বর্গ থেকে নেমে আসে ও জগৎকে জীবন দান করে, সেটিই ঈশ্বরের দেওয়া রুটি।'
34 তখন তারা তাঁকে বলল, 'প্রভু, তেমন রুটি আমাদের সর্বদাই দান করুন!
35 যিশু তাদের বললেন, “আমিই সেই জীবন-রুটি: যে কেউ আমার কাছে আসে, তার আর কখনও ক্ষুধা পাবে না, আর যে কেউ আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার আর কখনও তেষ্টা পাবে না।
36 কিন্তু আমি তোমাদের বলেছি, তোমরা দেখেছ, অথচ এখনও বিশ্বাস কর না।
37 পিতা আমাকে যা কিছু দান করেন, তা আমার কাছে আসবে, এবং যে কেউ আমার কাছে আসে, তাকে আমি কখনও ফিরিয়ে দেব না,
38 কারণ আমার নিজের ইচ্ছা পালন করতে নয়, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁরই ইচ্ছা পালন করতে আমি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছি।
39 আর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছা এ : তিনি যা কিছু আমাকে দিয়েছেন, আমি তার কিছুই না হারিয়ে বরং সমস্তই যেন শেষ দিনে পুনরুত্থিত করি।
40 এটিই আমার পিতার ইচ্ছা : যে কেউ পুত্রকে দেখে ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন অনন্ত জীবন পায়, এবং আমি যেন শেষ দিনে তাকে পুনরুত্থিত করি।'
41 তখন ইহুদীরা তাঁর বিরুদ্ধে গজগজ করতে লাগল, যেহেতু তিনি বলেছিলেন, আমিই সেই রুটি, যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে;
42 তারা বলছিল, 'লোকটা কি যোসেফের ছেলে সেই যিশু নয়, যার মাতাপিতাকে আমরা জানি? তাহলে সে কেমন করে বলতে পারে, আমি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছি?'
43 উত্তরে যিশু তাদের একথা বললেন, 'নিজেদের মধ্যে গজগজ করো না।
44 পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তিনি আকর্ষণ না করলে কেউই আমার কাছে আসতে পারে না, আর তাকেই আমি শেষ দিনে পুনরুত্থিত করব।
45 নবীদের পুস্তকে লেখা আছে, তারা সকলে স্বয়ং ঈশ্বরের কাছ থেকে শিক্ষা পাবে। যে কেউ পিতার কাছ থেকে শুনেছে ও শিক্ষা পেয়েছে, সে-ই আমার কাছে আসে।
46 কেউ যে পিতাকে দেখেছে, তা নয়, যিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে আগত, কেবল তিনিই পিতাকে দেখেছেন।
47 আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, যে কেউ বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পেয়ে গেছে।
48 আমিই সেই জীবন-রুটি।
49 তোমাদের পিতৃপুরুষেরা মরুপ্রান্তরে মান্না খেয়েছিলেন, তবুও তাঁরা মারা গেছেন।
50 এটিই সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে আসছে, যেন মানুষ তা খেতে পারে আর মরে না যায়।
51 আমিই সেই জীবনময় রুটি, যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। যদি কেউ এই রুটি খায়, তবে সে অনন্তকাল জীবিত থাকবে, আর আমি যে রুটি দান করব, তা আমার নিজের মাংস — জগতের জীবনের জন্য!
52 এতে ইহুদীরা নিজেদের মধ্যে তর্ক করতে লাগল; তারা বলছিল, 'লোকটা কী করে তার নিজের মাংসটা আমাদের খেতে দিতে পারে?
53 যিশু তাদের বললেন, 'আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, তোমরা যদি মানবপুত্রের মাংস না খাও ও তাঁর রক্ত পান না কর, তবে তোমাদের অন্তরে কোন জীবন নেই।
54 যে কেউ আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে, সে অনন্ত জীবন পেয়ে গেছে, আর আমি শেষ দিনে তাকে পুনরুত্থিত করব:
55 কারণ আমার মাংস প্রকৃত খাদ্য ও আমার রক্ত প্রকৃত পানীয়।
56 যে কেউ আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে, সে আমাতে বসবাস করে আর আমি তার অন্তরে বসবাস করি।
57 যেভাবে জীবনময় পিতা আমাকে প্রেরণ করেছেন, আর আমি পিতারই জন্য জীবিত, সেইভাবে যে আমাকে খায়, সে আমার জন্যই জীবিত থাকবে।
58 এটিই সেই রুটি, যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে—পিতৃপুরুষেরা যা খেয়েছিলেন, এই রুটি সেই রুটির মত নয়, তাঁরা তো মারা গেছেন ; যে কেউ এই রুটি খায়, সে অনন্তকাল জীবিত থাকবে।
59 এই সমস্ত কথা তিনি কাফার্নাউমে সমাজগৃহে উপদেশ দানকালে বলেছিলেন।
60 এই উপদেশ শোনার পর তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অনেকে বললেন, 'এ কথা কঠিন! তা কে শুনতে পারে ?'
61 কিন্তু যিশু মনে মনে জানতেন, তাঁর শিষ্যেরা নিজেদের মধ্যে এবিষয়ে গজগজ করছিলেন; তাঁদের বললেন, 'এ কি তোমাদের স্খলনের কারণ?
62 তবে মানবপুত্র আগে যেখানে ছিলেন, তোমরা যখন তাঁকে সেখানে আরোহণ করতে দেখবে, তখন কীবা বলবে?
63 আত্মাই জীবনদায়ী, মাংস কোন কাজের নয়। যে সমস্ত কথা আমি তোমাদের বলছি, সেই কথাই আত্মা, সেই কথাই জীবন।
64 কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমন কয়েকজন রয়েছে, যারা বিশ্বাস করে না। কেননা যিশু প্রথম থেকেই জানতেন, কারা বিশ্বাসহীন এবং তাঁর প্রতি কে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।
65 তিনি আরও বললেন, 'এজন্যই আমি তোমাদের বলেছি, কেউই আমার কাছে আসতে পারে না, যদি পিতার কাছ থেকেই তাকে এমনটি দেওয়া না হয়।'
66 এরপর থেকে তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অনেকে পিছিয়ে পড়ে চলে গেলেন, তাঁর সঙ্গে আর যেতেন না।
67 তখন যিশু সেই বারোজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমরাও কি চলে যেতে চাও?'
68 সিমোন পিতর তাঁকে উত্তর দিয়ে বললেন, ‘প্রভু, আমরা আর কার কাছেই বা যাব? অনন্ত জীবনের কথা আপনার কাছেই রয়েছে।
69 আর আমরা বিশ্বাস করেছি, জানতেও পেরেছি, আপনিই ঈশ্বরের সেই পবিত্রজন।"
70 উত্তরে যিশু তাঁদের বললেন, 'আমি কি তোমাদের, এই বারোজনকেই বেছে নিইনি? তবু তোমাদের মধ্যে একজন একটা দিয়াবল।”
71 একথা তিনি সিমোন ইস্কারিয়োতের ছেলে যুদাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন; এই যুদা— বারোজনের একজন—তিনিই তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করবেন।