Index

শিষ্যচরিত - Chapter 7

1 মহাযাজক জিজ্ঞাসা করলেন, 'এই সমস্ত কথা কি সত্য?
2 উত্তরে তিনি বললেন : “ভাই ও পিতা সকল, শুনুন! আমাদের পিতা আব্রাহাম হারানে বসতি করার আগে যখন মেসোপটেমিয়ায় বাস করতেন, তখন গৌরবের ঈশ্বর তাঁকে দেখা দিয়ে
3 বললেন, তোমার দেশ ও তোমার জ্ঞাতিকুটুম্বকে ছেড়ে বেরিয়ে পড়, এবং সেই দেশের দিকেই যাও, যা আমি তোমাকে দেখাব।
4 তখন তিনি কাদীয়দের দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে হারানে গিয়ে বসতি করলেন, আর তাঁর পিতার মৃত্যুর পরে ঈশ্বর সেখান থেকে তাঁর বাস উঠিয়ে তাঁকে এই দেশেই নিয়ে এলেন, যে দেশে আপনারা এখন বাস করছেন,
5 কিন্তু তাঁকে তিনি এই দেশে কোন কিছু নিজের অধিকার বলে দিলেন না, এক পা জমিও নয়, তবু প্রতিশ্রুতি দিলেন, তিনি তাঁকে ও তাঁর পরে তাঁর বংশধরদের এই দেশ নিজস্ব অধিকার বলে দেবেন—যদিও আব্রাহাম তখনও নিঃসন্তান ছিলেন!
6 ঈশ্বর যখন তাঁর সঙ্গে কথা বললেন, তখন তাঁর প্রকৃত কথা এ ছিল : তাঁর বংশধরেরা বিদেশে প্রবাসী হবে, এবং সেখানকার লোকেরা চারশ' বছর ধরে তাদের নিজেদের দাসত্বে রাখবে ও অত্যাচার করবে।
7 কিন্তু তারা যে জাতির দাস হবে, আমিই সেই জাতির বিচার করব। ঈশ্বর আরও বললেন, তারপরে তারা বেরিয়ে আসবে, এবং এই স্থানে আমার উপাসনা করবে।
8 তাঁকে তিনি পরিচ্ছেদন-সন্ধিও দিলেন; তাই আব্রাহামের সন্তান ইসায়াকের জন্ম হলে তিনি অষ্টম দিনে তাঁকে পরিচ্ছেদিত করলেন; একই প্রকারে ইসায়াক যাকোবকে, ও যাকোব সেই বারোজন কুলপতিকে পরিচ্ছেদিত করলেন।
9 কিন্তু কুলপতিরা যোসেফকে ঈর্ষা করে তাঁকে মিশরে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি করলেন। তবু ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন,
10 এবং তাঁর সমস্ত ক্লেশ থেকে তাঁকে উদ্ধার করলেন ও মিশর-রাজ ফারাওর সামনে তাঁকে এতই অনুগ্রহ ও প্রজ্ঞা দান করলেন যে, ফারাও তাঁকে মিশরের ও নিজের সমস্ত গৃহের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত করলেন।
11 পরে সারা মিশর জুড়ে ও কানান দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল, ভীষণ ক্লেশ ঘটল, আর আমাদের পিতৃপুরুষদের খাদ্যের অভাব হল।
12 মিশরে খাদ্য-সামগ্রী আছে শুনে যাকোব আমাদের পিতৃপুরুষদের প্রথমবার পাঠালেন :
13 দ্বিতীয়বার যোসেফ ভাইদের কাছে নিজের পরিচয় দিলেন, এবং ফারাওর কাছে যোসেফের জাতির পরিচয় প্রকাশ পেল।
14 তখন যোসেফ নিজের পিতা যাকোবকে ও নিজের গোটা পরিবার-পরিজনদের — মোট পঁচাত্তরজন লোককে নিজের কাছে ডেকে পাঠালেন।
15 যাকোব মিশরে পেলেন; এবং সেখানে তাঁর ও আমাদের পিতৃপুরুষদের মৃত্যু হওয়ার পর
16 তাঁদের দেহ সিখেমে আনা হল ও সেই সমাধিগুহায় তাঁদের সমাধি দেওয়া হল, যা আব্রাহাম সিখেমের পিতা সেই হামোরের সন্তানদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কিনেছিলে।
17 আব্রাহামের কাছে ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণের সময় যখন কাছে আসছে, তখন মিশরে জাতি বৃদ্ধি পেতে পেতে বিপুল হয়ে উঠল।
18 শেষে মিশরের রাজপদে এমন এক রাজা আবির্ভূত হলেন, যিনি যোসেফ সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না।
19 তিনি আমাদের জাতির সঙ্গে ছলচাতুরি করলেন, ও আমাদের পিতৃপুরুষদের এমনভাবেই অত্যাচার করলেন তাঁরা যেন নিজেদের শিশুদের বাইরে ফেলে রাখতে বাধ্য হন, যাতে তারা না বাঁচে।
20 সেসময়েই মোশীর জন্ম হয়। তিনি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সুন্দর ছিলেন; তিন মাস ধরে তাঁকে নিজের পিতার ঘরে লালন-পালন করা হল।
21 পরে, যখন তাঁকে বাইরে ফেলে রাখা হল, তখন ফারাওর কন্যা তাঁকে দত্তক রূপে গ্রহণ করলেন ও নিজের সন্তান বলে লালন-পালন করলেন।
22 এভাবে মোশীকে মিশরীয়দের সমস্ত জ্ঞান-বিদ্যা শেখানো হল এবং তিনি কথা-কর্মে পরাক্রমী হয়ে উঠলেন।
23 যখন তাঁর প্রায় চল্লিশ বছর বয়স হয়, তখন তিনি নিজের ভাই সেই ইস্রায়েল সন্তানদের দেখতে যাবেন বলে স্থির করলেন।
24 একজনের প্রতি দুর্ব্যাবহার করা হচ্ছে দেখে তিনি তার পক্ষে দাঁড়িয়ে সেই মিশরীয়কে আঘাত করায় অত্যাচারিত মানুষের পক্ষে প্রতিশোধ নিলেন।
25 তিনি মনে করছিলেন, তাঁর ভাইয়েরা বুঝবে যে, ঈশ্বর তাঁর হাত দিয়ে তাদের পরিত্রাণ সাধন করছেন, কিন্তু তারা বুঝল না।
26 পরদিন তারা যখন মারামারি করছিল, তখন তিনি সেখানে দেখা দিয়ে মিল ঘটাতে চেষ্টা করলেন; বললেন, তোমরা তো পরস্পরের ভাই ! এত হানাহানি কেন?
27 কিন্তু নিজের প্রতিবেশীকে যে আক্রমণ করেছিল, সে ধাক্কা মেরে এই বলে তাঁকে সরিয়ে দিল, আমাদের উপরে কে তোমাকে জননায়ক ও বিচারকর্তা করে নিযুক্ত করেছে?
28 গতকাল তুমি যেমন সেই মিশরীয়কে হত্যা করেছিলে, তেমনি কি আমাকেও হত্যা করতে চাও?
29 এই কথায় মোশী পালিয়ে গিয়ে মিদিয়ান দেশে প্রবাসী হয়ে থাকলেন; সেখানে দুই পুত্রসন্তানের পিতা হলেন।
30 চল্লিশ বছর অতিবাহিত হলে সিনাই পর্বতের প্রান্তরে এক দূত জ্বলন্ত এক ঝোপে অগ্নিশিখার মধ্যে তাঁকে দেখা দিলেন।
31 মোশী এই দৃশ্যে আশ্চর্য হয়ে রইলেন, এবং ভাল করে দেখবার জন্য কাছে এগিয়ে যাচ্ছেন, এমন সময়ে প্রভুর কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হল :
32 আমি তোমার পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর : আব্রাহাম, ইসায়াক ও যাকোবের ঈশ্বর ! মোশী কম্পিত হয়ে সেদিকে তাকাতে সাহস করলেন না।
33 প্রভু তাঁকে বললেন, পা থেকে জুতো খুলে ফেল, কারণ যে স্থানে তুমি দাঁড়িয়ে আছ, তা পবিত্র ভূমি।
34 মিশরে আমার আপন জনগণের দুর্দশা আমি দেখেছি, তাদের হাহাকার শুনেছি, আর তাদের উদ্ধার করতে নেমে এসেছি; এখন এসো, আমি তোমাকে মিশরে প্রেরণ করছি।
35 এই যে মোশীকে তারা এই ব'লে অস্বীকার করেছিল, কে তোমাকে জননায়ক ও বিচারকর্তা করে নিযুক্ত করেছে, সেই মোশীকেই ঈশ্বর ঝোপের মধ্যে দেখা-দেওয়া সেই দূত দ্বারা জননায়ক ও মুক্তিসাধক করে প্রেরণ করলেন।
36 ইনিই মিশরে, লোহিত সাগরে ও চল্লিশ বছর ধরে প্রান্তরে নানা অলৌকিক লক্ষণ ও চিহ্নকর্ম সাধন করে তাদের বের করে আনলেন।
37 এই মোশীই ইস্রায়েল সন্তানদের এই কথা বললেন, ঈশ্বর তোমাদের জন্য তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে আমার মত এক নবীর উদ্ভব ঘটাবেন।
38 প্রান্তরে সেই জনসমাবেশের দিনে তিনিই তো উপস্থিত ছিলেন : যে দূত সিনাই পর্বতে তাঁর কাছে কথা বলেছিলেন, তিনিই সেই দূত এবং আমাদের পিতৃপুরুষদের মধ্যে মধ্যস্থ ছিলেন। তিনিই সেই জীবন-বাণী পেলেন যেন সেই বাণী আমাদের দান করেন।
39 অথচ আমাদের পিতৃপুরুষেরা তাঁর প্রতি বাধ্য হতে চাইলেন না, বরং তাঁকে সরিয়ে দিলেন, মনে মনে মিশরে ফিরে গেলেন,
40 এবং আরোনকে বললেন, আমাদের জন্য এমন দেবতাদের মূর্তি তৈরি কর যাঁরা আমাদের আগে আগে চলবেন, কেননা এই যে মোশী মিশর দেশ থেকে আমাদের এখানে এনেছেন, তাঁর কি ঘটল তা আমরা জানি না।
41 সেসময়ে তাঁরা একটা বায়ুর তৈরি করে সেই মূর্তির প্রতি বলি উৎসর্গ করলেন, ও নিজেদের হাতে গড়া বস্তুর জন্য ফুর্তি করলেন।
42 কিন্তু ঈশ্বর তাঁদের প্রতি বিমুখ হলেন, আকাশের তারকা বাহিনীর উপাসনায় তাঁদের ছেড়ে দিলেন, ঠিক যেমনটি নবীদের পুস্তকে লেখা আছে:
হে ইস্রায়েলকুল, প্রান্তরে সেই চল্লিশ বছর ধরে
তোমরা কি আমার প্রতি কোন বলি বা অর্ঘ্য উৎসর্গ করলে?
43 তোমরা বরং মোলক দেবের তাঁবু
ও রেফান দেবের তারাটা তুলে বহন করলে,
সেই মূর্তি দু'টো যা পূজা করার জন্য তোমরা গড়েছিলে!
তাই আমি তোমাদের বাবিলনের ওপার দেশে দেশছাড়া করতে যাচ্ছি।
44 যেমন তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, সেই অনুসারে প্রান্তরে আমাদের পিতৃপুরুষদের সেই সাক্ষ্য-তাঁবু ছিল; মোশী তাঁবুর যে নমুনা দেখতে পেয়েছিলেন, তাঁকে তিনি সেই নমুনা অনুসারেই তাঁবুটা তৈরি করতে বলেছিলেন।
45 আর সেই তাঁবু গ্রহণ করে আমাদের পিতৃপুরুষেরা যোগুয়ার সঙ্গে তা সঙ্গে করে বহন ক'রে সেই জাতিগুলির অধিকার ভূমিতে প্রবেশ করলেন যাদের ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দিলেন। তাঁবুটা দাউদের সময় পর্যন্ত রইল।
46 ইনি ঈশ্বরের কাছে অনুগ্রহ পেলেন, এবং যাকোবের ঈশ্বরের জন্য একটি আবাস প্রস্তুত করার অনুমতি যাচনা করলেন;
47 সলোমনই কিন্তু তাঁর জন্য একটি গৃহ গেঁথে তুললেন।
48 তবু পরাৎপর যিনি, তিনি তো হাতে গড়া এক গৃহে বাস করেন না, যেমনটি নবী বলেন :
49 'যখন স্বর্গ আমার সিংহাসন
ও পৃথিবী আমার পাদপীঠ,
তখন—প্রভু বলছেন—
আমার জন্য তোমরা কেমন গৃহ গেঁথে তুলবে?
50 কিংবা কোথায় হবে আমার বিশ্রামস্থান ?
আমারই হাত কি এই সবকিছু গড়েনি?'
51 হে জেদি মানুষ ! আপনাদের কান ও হৃদয়ই অপরিচ্ছেদিত! আপনারা সবসময় পবিত্র আত্মাকে প্রতিরোধ করে থাকেন। আপনাদের পিতৃপুরুষেরা যেমন, আপনারাও তেমন।
52 আপনাদের পিতৃপুরুষেরা নবীদের মধ্যে কাকেই বা নির্যাতন করেননি? যাঁরা সেই ধর্মাত্মারই আগমন সংবাদ দিতেন যাঁর প্রতি আপনারা কিছু দিন আগে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ও হত্যা করেছেন, তাঁদেরই তাঁরা হত্যা করতেন ;
53 হ্যাঁ সেই আপনারাই, যাঁরা দূতদের হাত দিয়ে বিধান পাওয়া সত্ত্বেও তা পালন করেননি!”
54 এই কথা শুনে তাঁরা অন্তরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন, তাঁর দিকে দাঁতে দাঁত ঘষতে লাগলেন।
55 কিন্তু তিনি পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে স্বর্গের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ঈশ্বরের গৌরব দেখতে পেলেন; এও দেখতে পেলেন, ঈশ্বরের ডান পাশে যিশু দাঁড়িয়ে আছেন;
56 তিনি বলে উঠলেন, 'আমি দেখতে পাচ্ছি, স্বৰ্গ উন্মুক্ত, এবং মানবপুত্র ঈশ্বরের ডান পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।
57 তাঁরা কানে আঙুল দিয়ে জোর গলায় চিৎকার করতে লাগলেন আর সবাই মিলে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন ;
58 এবং তাঁকে শহর থেকে বের করে এনে পাথর ছুড়ে মারতে লাগলেন; সাক্ষীরা নিজেদের জামাকাপড় সৌল নামে একটি যুবকের পায়ের কাছে রাখল।
59 তারা স্তেফানকে পাথর মারতে মারতেই তিনি এই মিনতি নিবেদন করলেন, 'প্রভু যিশু, আমার আত্মা গ্রহণ কর।'
60 পরে নতজানু হয়ে জোর গলায় বলে উঠলেন, 'প্রভু, এই পাপের জন্য এদের দায়ী করো না।' এবং এ বলে নিদ্রা গেলেন। তাঁর হত্যায় সৌলের সম্মতি ছিল।