1 যখন স্থির করা হল যে, আমরা জাহাজে করে ইতালি অভিমুখে যাত্রা করব, তখন পলকে এবং আরও কয়েকজন বন্দিকে আউগুস্তা সেনাদলের একজন শতপতির হাতে তুলে দেওয়া হল, যাঁর নাম জুলিউস।
2 আদ্রামিত্তিয়ামের এমন একটা জাহাজে উঠলাম, যা এশিয়ার নানা জায়গায় যাওয়ার কথা। মাকিদনিয়ার থেসালোনিকীয় আরিস্তার্থসও আমাদের সঙ্গে ছিলেন।
3 পরদিন আমরা সিদোনে ত এসে ভিড়লাম ; আর জুলিউস পলের প্রতি যথেষ্ট দয়া দেখিয়ে তাঁকে বন্ধুবান্ধবদের কাছে গিয়ে তাদের কাছ থেকে একটু সেবাযত্ন পাবার অনুমতি দিলেন।
4 সেখান থেকে আমরা আবার জলপথে রওনা হলাম; বাতাস উল্টো হওয়ায় আমরা সাইপ্রাস দ্বীপের আড়ালে থেকে এগিয়ে চললাম।
5 পরে কিলিকিয়া ও পাক্ষিলিয়ার সামনে দিয়ে সাগর পার হয়ে লিসিয়া প্রদেশের মিরায় নামলাম।
6 সেখানে আলেক্সান্দ্রিয়ার একটা জাহাজ ইতালিতে যাচ্ছে দেখে শতপতি আমাদের সেই জাহাজে তুলে নিলেন।
7 বেশ কিছুদিন ধরে আস্তে আস্তে চলে কষ্ট করে ক্লিনসের সামনাসামনি এসে পৌঁছলাম; কিন্তু বাতাসে আর এগিয়ে যেতে না পারায় আমরা সালমোনী অন্তরীপের পাশ দিয়ে গিয়ে ত্রুটি দ্বীপের আড়ালে থেকে এগিয়ে চললাম।
8 পরে কষ্ট করে উপকূলের ধার ঘেঁষে ঘেঁষে গিয়ে “শুভ বন্দর' নামে একটা জায়গায় এসে পৌঁছলাম, যা লাসাইয়া শহরের কাছাকাছি।
9 বহুদিন নষ্ট হয়েছিল বিধায়, এবং উপবাস পর্ব অতীত হয়েছিল বিধায় জলযাত্রা বিপজ্জনক হওয়ায় পল তাদের সতর্ক করে বলছিলেন,
10 মানুষ, আমি দেখতে পাচ্ছি, এই যাত্রায় অমঙ্গল ও যথেষ্ট ক্ষতি হবে—শুধু মালপত্র বা জাহাজের নয়, আমাদের প্রাণেরও ক্ষতি হবে।
11 কিন্তু শতপতি পলের কথার চেয়ে জাহাজের সারেঙ ও মালিকের কথায় বেশি কান দিলেন।
12 সেই 'শুভ বন্দর' শীতকাল কাটানোর উপযুক্ত জায়গা না হওয়ায় বেশির ভাগ লোক সেখান থেকে এগিয়ে যাবার মত প্রকাশ করল, যেন কোন রকমে ফিনিক্সে পৌঁছে সেইখানে শীতকাল কাটাতে পারে। ফিনিক্স হচ্ছে ক্রীটের একটি বন্দর, যার দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক খোলা।
13 যখন মৃদু দক্ষিণা বাতাস বইতে লাগল, তখন তারা, তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়েছে মনে ক'রে নঙর তুলে ক্রীটের ধার ঘেঁষে এগিয়ে যেতে লাগল ।
14 কিন্তু অল্পকাল পরে দ্বীপের ভিতর থেকে তুফানের মত প্রচণ্ড এক বাতাস ছুটে এল, যার নাম ঈশান বায়ু।
15 তখন জাহাজ ঝড়ের মধ্যে পড়ে বাতাসের মুখোমুখি আর দাঁড়াতে না পারায় আমরা তা ভেসে যেতে দিলাম।
16 কাউদা নামে একটা ছোট দ্বীপের আড়ালে থেকে চলে বহু কষ্ট করে জাহাজের ডিঙিটা সামনে নিতে পারলাম।
17 তখন নাবিকেরা তা তুলে নেওয়ার পর মোটা কাছি জাহাজের চারপাশে জড়িয়ে শক্ত করে বেঁধে নিল। পরে, পাছে সির্ভিসের চরে ঠেকে যাই, এই ভয়ে তারা ভাসা নঙরটা জলে নামিয়ে দিল; আর এভাবে জাহাজটা এমনিই ভেসে যেতে লাগল ।
18 ঝড়ের প্রচণ্ড ধাক্কা খাচ্ছিলাম বিধায় পরদিন তারা মালপত্র জলে ফেলে দিতে লাগল।
19 তৃতীয় দিনে তারা নিজেদের হাতেই জাহাজের সরঞ্জামও ফেলে দিল।
20 আর অনেক দিন পর্যন্ত সূর্য কি তারা মুখ দেখাচ্ছিল না বিধায়, এবং ঝড়ের তাণ্ডব অবিরতই চলছিল বিধায় আমরা শেষে মনে করছিলাম, এবার রক্ষা পাবার আর কোন আশা নেই।
21 সকলে অনেক দিন না খেয়ে থাকার পর, পল তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘মানুষ, তোমাদের উচিত ছিল, আমার কথা মেনে নিয়ে ক্রীট থেকে জাহাজ না ছাড়া; তবেই এই অমঙ্গল ও ক্ষতি এড়াতে পারতে।
22 যাই হোক, এখন আমার পরামর্শ এ ভেঙে পড়ো না, কারণ কারও প্রাণের হানি হবেই না, কেবল জাহাজেরই হবে।
23 কেননা আমি যে ঈশ্বরের মানুষ ও যাঁর সেবা করি, তাঁর এক দূত গত রাতে আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে
24 বললেন, পল, ভয় করো না, সীজারের সামনে তোমাকে দাঁড়াতেই হবে। আর দেখ, তোমার জন্যই ঈশ্বর তোমার সকল সহযাত্রীর প্রাণ রক্ষা করবেন।
25 তাই, হে মানুষেরা, ভেঙে পড়ো না, কারণ ঈশ্বরে আমার এমন আস্থা আছে যে, আমার কাছে যেমনটি বলা হয়েছে, তেমনিই ঘটবে।
26 তবে কোন একটা দ্বীপে গিয়ে আমাদের পড়তেই হবে।
27 এভাবে আমরা আদ্রিয়া সাগরে ভেসে যেতে যেতে যখন চৌদ্দ দিনের রাত এল, তখন মাঝরাতের দিকে নাবিকেরা অনুমান করতে লাগল যে, তারা কোন একটা দেশের কাছাকাছি এসে যাচ্ছে।
28 ওলনদড়ি ফেলে মেপে দেখা গেল, সেখানে জলের গভীরতা বিশ বাঁও। একটু পরে আবার দড়ি ফেলে মাপা হল : দেখা গেল, পনেরো বাঁও।
29 তখন পাছে আমরা কোন পাথুরে উপকূলে গিয়ে পড়ি, এই ভয়ে জাহাজের পিছন দিক থেকে চারটে নঙর নামিয়ে দিয়ে তারা উন্মুখ হয়ে সকালের অপেক্ষায় বসে থাকল।
30 নাবিকেরা জাহাজ থেকে একবার পালাতে চেষ্টা করেছিল; গলুইয়ের দিক থেকে কয়েকটা নঙর ফেলবার ছল করে তারা ডিঙিটা সমুদ্রে নামিয়ে দিয়েছিল; এজন্য পল শতপতিকে ও সৈন্যদের বললেন,
31 ওরা জাহাজে না থাকলে আপনারা রক্ষা পেতে পারবেন না।”
32 তাই সৈন্যেরা ডিঙির দড়ি কেটে তা জলে পড়তে দিল।
33 সকাল হয়ে আসছে, সেসময় পল সকল লোককে কিছু খেতে অনুরোধ করতে লাগলেন; বললেন, “আজ চৌদ্দ দিন হল, আপনারা কিছু না খেয়ে অনাহারে অপেক্ষা করতে করতে বসে আছেন;
34 তাই আমার অনুরোধ : কিছু খেয়ে নিন, নিজেদের বাঁচানোর জন্য কিছুটা খাওয়া দরকার! আপনাদের কারও মাথার এক গাছি চুলও নষ্ট হবে না।
35 তা বলে পল রুটি নিয়ে সকলের চোখের সামনে ঈশ্বরের উদ্দেশে ধন্যবাদ-স্তুতি উচ্চারণ করলেন, এবং তা ছিঁড়ে খেতে শুরু করলেন।
36 তখন সকলে সাহস পেল, এবং তারাও খেতে লাগল ।
37 সেই জাহাজে আমরা মোট দু'শো ছিয়াত্তরজন লোক ছিলাম,
38 সকলে খেয়ে তৃপ্ত হলে পর তারা সমস্ত গম সমুদ্রে ফেলে দিয়ে জাহাজটা হালকা করে দিল।
39 সকাল হলে তারা বুঝতে পারছিল না, সেটা কোন জায়গা। কিন্তু তারা লক্ষ করল, সামনে বালুতটে ঘেরা একটা উপসাগর আছে; পরামর্শ করল, সম্ভব হলে সেই বালুতটের উপরে জাহাজটা তুলে দেবে।
40 তারা নঙরগুলো কেটে সমুদ্রে ছেড়ে দিল, এবং একই সময়ে হালগুলোর বাঁধনও খুলে দিল ; পরে সামনের দিকের পাল বাতাসের মুখে তুলে দিয়ে বালুতটের দিকে চলতে লাগল।
41 কিন্তু একটা চরে হঠাৎ ঠেকে গিয়ে জাহাজটা আটকে গেল, আর জাহাজের সামনের দিক আটকে গিয়ে অচল হয়ে রইল, কিন্তু পশ্চাদ্ভাগ প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে আঘাতে ভেঙে যেতে লাগল।
42 বন্দিরা পাছে সাঁতার দিয়ে পালিয়ে যায়, সেই ভয়ে সৈন্যেরা তাদের মেরে ফেলতে চাচ্ছিল,
43 কিন্তু শতপতি পলকে রক্ষা করার ইচ্ছায় তাদের সেই সঙ্কল্প থেকে ক্ষান্ত করলেন। তিনি হুকুম দিলেন, যারা সাঁতার জানে, তারা আগে ঝাঁপ দিয়ে ডাঙায় উঠবে,
44 আর বাকি সকলে তক্তা কিংবা জাহাজের যা কিছু পায়, তা ধরে ডাঙায় উঠবে। এভাবে সকলে ডাঙায় উঠে রক্ষা পেল।