1 আনানিয়াস নামে একজন লোক ছিল; তার স্ত্রী সাফীরার সঙ্গে সে একটা সম্পত্তি বিক্রি করল,
2 এবং স্ত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে টাকার কিছুটা অংশ রেখে দিল, আর বাকি অংশটা এনে প্রেরিতদূতদের পায়ের কাছে রাখল।
3 পিতর বললেন, 'আনানিয়াস, শয়তান কেমন করে তোমার হৃদয় এতই দখল করেছে যে, তুমি পবিত্র আত্মার কাছে মিথ্যা বলেছ ও জমির টাকার কিছুটা রেখেছ?
4 জমিটা বিক্রি করার আগে তা কি তোমারই ছিল না? বিক্রি করার পরেও সেই টাকার উপরে তোমার কি পুরো অধিকার ছিল না? তবে এমন কাজ করার ভাব তোমার হৃদয়ে স্থান পেল কেন? তুমি তো মানুষের কাছে নয়, ঈশ্বরেরই কাছে মিথ্যা বলেছ।'
5 এই সমস্ত কথা শোনামাত্র আনানিয়াস মাটিতে পড়ে মারা গেল ; আর যারা শুনছিল, তারা সকলেই ভীষণ ভয়ে অভিভূত হল।
6 তখন খুবকেরা উঠে তাকে কাপড়ে জড়াল ও বাইরে নিয়ে গিয়ে তার কবর দিল।
7 প্রায় তিন ঘণ্টা পরে তার স্ত্রীও এসে উপস্থিত হল; কিন্তু কী ঘটেছে, সে তা জানত না।
8 পিতর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'বল দেখি, তোমরা সেই জমি এই দামেই কি বিক্রি করেছিলে?' সে বলল, 'হ্যাঁ, এই দামে।
9 তখন পিতর তাকে বললেন, “তোমরা কেন প্রভুর আত্মাকে যাচাই করার জন্য একমত হয়েছিলে? এই যে, যারা তোমার স্বামীর কবর দিয়েছে, তাদের পায়ের শব্দ দরজায় শোনা যাচ্ছে; তারা তোমাকেও বাইরে নিয়ে যাবে।
10 সে ঠিক সেই মুহূর্তেই তাঁর পায়ের কাছে মাটিতে পড়ে মারা গেল। আর সেই যুবকেরা যখন ভিতরে এল, তখন তাকে মৃত অবস্থায় পেল, এবং বাইরে নিয়ে গিয়ে তার স্বামীর পাশে তার কবর দিল।
11 তখন গোটা মণ্ডলী, আর যারা একথা শুনতে পেল, সকলেই ভীষণ ভয়ে অভিভূত হল।
12 প্রেরিতদূতদের দ্বারা জনগণের মধ্যে বহু চিহ্ন ও অলৌকিক লক্ষণ দেখা দিত; তারা সকলে একমন হয়ে সলোমন-অলিন্দে মিলিত হত।
13 তাদের সঙ্গে যোগ দিতে অন্য কেউ সাহস করত না, কিন্তু জনগণ তাদের ভাল বলত।
14 দিনে দিনে উত্তরোত্তর বহু পুরুষ ও নারী বিশ্বাসী হয়ে প্রভৃতে যুক্ত হত;
15 এমনকি লোকেরা রাস্তার ধারে ধারে অসুস্থদের এনে খাটিয়ায় বা বিছানায় শুইয়ে রাখত, যেন পিতর সেদিকে যাওয়ার সময়ে কমপক্ষে তাঁর ছায়াই কারও কারও গায়ে পড়ে।
16 আর যেরুসালেমের আশেপাশের শহরগুলো থেকেও বহু লোক জড় হতে লাগল, তারা অসুস্থদের ও অশুচি আত্মায় নিপীড়িত মানুষকে নিয়ে আসত, আর তারা সকলেই সুস্থ হয়ে উঠত।
17 তখন মহাযাজক ও তাঁর সমর্থনকারীরা, অর্থাৎ সাদুকি সম্প্রদায়ের লোকেরা উঠলেন; ঈর্ষায় পরিপূর্ণ হয়ে
18 তাঁরা প্রেরিতদূতদের গ্রেপ্তার করে হাজতখানায় আটকে রাখলেন।
19 কিন্তু রাতের বেলায় প্রভুর দূত কারাগারের দরজাগুলো খুলে দিলেন, ও সকলকে বাইরে চালিত করে বললেন,
20 যাও, মন্দিরে দাঁড়িয়ে জনগণের কাছে এই জীবন-সংক্রান্ত সমস্ত কথা প্রচার কর।
21 তা শুনে তাঁরা সকালবেলায় মন্দিরে প্রবেশ করে উপদেশ দিতে লাগলেন। এদিকে মহাযাজক ও তাঁর সমর্থনকারীরা এসে মহাসভা, অর্থাৎ ইস্রায়েল সম্ভানদের প্রবীণবর্গের সভা ডেকে সমবেত করলেন, এবং তাঁদের আনবার জন্য কারাগারে লোক পাঠালেন।
22 কিন্তু নিযুক্ত সেই লোকেরা কারাগারে গিয়ে সেখানে তাঁদের পেল না ; তাই ফিরে এসে জানাল,
23 আমরা দেখলাম, কারাগার একেবারে ভাল করে বন্ধ করা আছে, দরজায় দরজায় প্রহরীরাও পাহারা দিচ্ছে, অথচ দরজা খুলে ভিতরে কাউকে পেলাম না।'
24 তেমন কথা শুনে মন্দিরপাল ও প্রধান যাজকেরা দিশেহারা হয়ে ভাবতে লাগলেন, এই সমস্ত কিছুর অর্থ কী ;
25 আর ঠিক তখনই কে যেন একজন এসে তাঁদের জানাল, 'দেখুন, আপনারা যাদের কারাগারে রেখেছিলেন, সেই লোকেরা মন্দিরে দাঁড়িয়ে সকলকে উপদেশ শোনাচ্ছে।'
26 মন্দিরপাল প্রহরীদের সঙ্গে করে সেখানে গিয়ে তাঁদের নিয়ে এলেন, কিন্তু বল প্রয়োগে নয়, কারণ তারা ভয় করছিল হয় তো জনগণ তাদের পাথর ছুড়ে মারবে।
27 তারা তাঁদের নিয়ে এসে মহাসভার সামনে দাঁড় করালে মহাযাজক তাঁদের জেরা করতে লাগলেন ; তিনি বললেন,
28 ‘আমরা এই নামকে কেন্দ্র করে উপদেশ দিতে তোমাদের স্পষ্টভাবেই নিষেধ করেছিলাম; তবু দেখ, তোমরা নিজেদের উপদেশে যেরুসালেমকে পূর্ণ করেছ, এবং সেই লোকটার রক্তপাতের দায়িত্ব আমাদের উপরে চাপাতে চাচ্ছ।'
29 পিতর ও অন্যান্য প্রেরিতদূতেরা উত্তরে বললেন, 'মানুষের প্রতি বাধ্য হওয়ার চেয়ে বরং ঈশ্বরেরই প্রতি বাধ্য হওয়া উচিত।
30 একটা গাছে ঝুলিয়ে আপনারা যাঁকে হত্যা করেছিলেন, আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বরই সেই যিশুকে পুনরুত্থিত করেছেন।
31 তাঁকেই ঈশ্বর জননায়ক ও ত্রাণকর্তা ক'রে আপন ডান হাত দ্বারা উত্তোলিত করেছেন, যেন ইস্রায়েলকে মনপরিবর্তন ও পাপমুক্তি দান করতে পারেন।
32 আমরা নিজেরাই এই সবকিছুর সাক্ষী; আর সাক্ষী আছেন সেই পবিত্র আত্মাও, যাঁকে ঈশ্বর তাদেরই কাছে দান করেছেন, যারা তাঁর প্রতি বাধ্য।'
33 একথা শুনে তাঁরা অধিক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন, এবং তাঁদের হত্যা করতে চাচ্ছিলেন।
34 কিন্তু গামালিয়েল নামে মহাসভার একজন ফরিসি সদস্য তখন উঠে দাঁড়ালেন তিনি ছিলেন একজন বিধানাচার্য, তাছাড়া সমস্ত জনগণের সম্মানের পাত্র ছিলেন। তিনি প্রেরিতদূতদের কিছুক্ষণ বাইরে রাখতে নির্দেশ দিলেন।
35 পরে মহাসভার সদস্যদের উদ্দেশ করে একথা বললেন, 'ইস্রায়েলের মানুষেরা, এই লোকদের বিষয়ে আপনারা কী করতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে সাবধান হোন ।
36 কেননা কিছু দিন আগে ঘেউদাস উঠে নিজেকে বিশেষ ব্যক্তিত্ব বলে দাবি করেছিল, এবং আনুমানিক চারশ' লোক তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল; কিন্তু সে নিহত হওয়ার পর যত লোক তার অনুসরণ করেছিল, সকলেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল, তাদের দলের কিছুই রইল না।
37 সেই লোকটার পরে লোকগণনার সময়ে গালিলেয়ার মুদা উঠে কতগুলো লোককে নিজের পিছনে আকর্ষণ করেছিল; কিন্তু সেও বিনষ্ট হল, আর যত লোক তার অনুসরণ করেছিল, সকলে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল।
38 এখন আমি আপনাদের একথা বলছি, আপনারা এই লোকদের ব্যাপার নিয়ে ক্ষান্ত হোন, তাদের যেতে দিন; কারণ এই আন্দোলন বা এই প্রচেষ্টা যদি মানুষ থেকে আসে, তবে এমনিই বিলুপ্ত হবে;
39 কিন্তু যদি ঈশ্বর থেকে আসে, তাহলে তাদের বিলুপ্ত করতে আপনারা সক্ষম হবেন না। এমনটি যেন না ঘটে যে, আপনারা ঈশ্বরের সঙ্গেই সংগ্রাম করছেন!”
40 তাঁরা তাঁর কথায় সম্মতি দিলেন, এবং প্রেরিতদূতদের ভিতরে ডাকিয়ে এনে তাঁদের কশাঘাত করালেন, এবং যিশুর নামকে কেন্দ্র করে কোন কিছু বলতে নিষেধ করে তাঁদের মুক্ত করে দিলেন।
41 সেই নামের খাতিরে অপমান বরণের যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন ব'লে তাঁরা আনন্দ করতে করতে মহাসভা থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
42 প্রতিদিন তাঁরা মন্দিরে ও বাড়িতে বাড়িতে উপদেশ দিতেন এবং মসীহ যিশুর শুভসংবাদ প্রচার করতেন—একাজে তাঁরা কখনও ক্ষান্ত হতেন না।