1 ভাই ও পিতা সকল, আপনাদের কাছে আমার এই আত্মপক্ষ সমর্থনের কথা শুনুন।'
2 যখন তারা শুনল, তিনি তাদের কাছে হিব্রু ভাষায়ই কথা বলছেন, তখন নিস্তব্ধতা আরও গভীরতর হল।
3 তিনি বলে চললেন, 'আমি ইহুদী, কিলিকিয়া প্রদেশের তার্সসে আমার জন্ম, কিন্তু এই নগরীতেই মানুষ হয়েছি ; গামালিয়েলের পায়ের কাছে বসে আমি পিতৃবিধানের সূক্ষ্মতম নিয়ম অনুসারেই শিক্ষা পেয়েছি; ঈশ্বরের প্রতি আমারও গভীর আগ্রহ ছিল, যেমন আপনাদের সকলের আজ রয়েছে।
4 আমি প্রাণনাশ পর্যন্তই এই পথ নির্যাতন করতাম, পুরুষ-মহিলাদের বেঁধে কারাগারে তুলে দিতাম।
5 এবিষয়ে স্বয়ং মহাযাজক ও সমস্ত প্রবীণবর্গও আমার সাক্ষী। তাঁদের কাছ থেকে ভাইদের জন্য পত্র নিয়ে আমি দামাস্কাসে যাত্রা করছিলাম, যারা সেখানে ছিল, দণ্ডিত হবার জন্য তাদেরও যেন বেঁধে যেরুসালেমে নিয়ে আসতে পারি।
6 তখন এমনটি ঘটল যে, যেতে যেতে আমি দামাস্কাসের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছি, এমন সময় হঠাৎ দুপুর বারোটায় আকাশ থেকে একটা তীব্র আলো আমার চারদিকে জ্বলতে লাগল।
7 আমি মাটিতে পড়ে গেলাম, এবং শুনতে পেলাম, এক বন্ঠস্বর আমাকে বলছে, সৌল, সৌল, কেন আমাকে নির্যাতন করছ?
8 আমি উত্তর দিলাম, প্রভু, আপনি কে? তিনি আমাকে বললেন, আমি নাজারেথীয় যিশু, যাঁকে তুমি নির্যাতন করছ।
9 আমার সঙ্গীরা সেই আলো দেখতে পেল বটে, অথচ যে কন্ঠস্বর আমার সঙ্গে কথা বলছিল, তা তারা শুনতে পেল না।
10 পরে আমি বললাম, প্রভু, আমি কী করব? প্রভু আমাকে বললেন, ওঠ, দামাস্কাসে যাও; আর তোমাকে কী করতে হবে বলে নিরূপিত আছে, সেই সমস্ত তোমাকে বলা হবে।
11 আর যেহেতু সেই আলোর তেজে আমি আর কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না, সেজন্য আমার সঙ্গীরা আমাকে হাত ধরে চালিত করতে করতেই আমি দামাস্কাসে এসে পৌঁছলাম।
12 আনানিয়াস নামে কোন একজন লোক, যিনি ভক্তপ্ৰাণ বিধান-পরায়ণ ও সেখানকার অধিবাসী সকল ইহুদী যাঁর সুখ্যাতি করত,
13 তিনি আমার কাছে এসে পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ভাই সৌল, দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাও! আর সেই ক্ষণেই আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলাম।
14 পরে তিনি বললেন, আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছা জানবার জন্য এবং সেই ধর্মাত্মাকে দেখবার ও তাঁর মুখের কণ্ঠস্বর শুনবার জন্য আগে থেকে তোমাকে নিযুক্ত করেছেন ;
15 কারণ তুমি যা দেখতে ও শুনতে পেয়েছ, সকল মানুষের কাছে সেই সমস্ত বিষয়ে তোমাকে তাঁর সাক্ষী হতে হবে।
16 আর এখন তুমি কেন দেরি করছ? ওঠ, তাঁর নাম করে বাপ্তিস্ম গ্রহণ কর ও তোমার সমস্ত পাপ ধুয়ে ফেল ।
17 এমনটি ঘটল যে, আমি যেরুসালেমে ফিরে এসে মন্দিরে প্রার্থনা করছিলাম, এমন সময়ে আমার ভাবসমাধি হল,
18 তখন তাঁকে দেখতে পেলাম ; তিনি আমাকে বললেন, দেরি না করে শীঘ্রই যেরুসালেম ছেড়ে চলে যাও, কারণ এই লোকেরা আমার বিষয়ে তোমার সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না।
19 আমি বললাম, প্রভু, তারা তো জানে যে, যারা তোমার প্রতি বিশ্বাসী হয়ে উঠছিল, আমিই তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করতাম ও প্রতিটি সমাজগৃহে তাদের বেত মারতাম।
20 আর যখন তোমার সাক্ষী সেই স্তেফানের রক্তপাত হয়, তখন আমি নিজেই পাশে দাঁড়িয়ে সম্মতি দিচ্ছিলাম, আর যারা তাঁকে হত্যা করছিল, তাদের জামাকাপড় পাহারা দিচ্ছিলাম।
21 তিনি আমাকে বললেন, যাও, কারণ আমি তোমাকে দূরে, বিজাতীয়দেরই কাছে, প্রেরণ করতে যাচ্ছি।'
22 লোকেরা এপর্যন্ত তাঁর কথা শুনেছিল, কিন্তু তাঁর এই কথায় জোর গলায় বলতে লাগল, ‘ওকে পৃথিবী থেকে দূর করে দাও! ও বেঁচে থাকার যোগ্য নয় !”
23 এবং চিৎকার করতে করতে নিজেদের চাদর ফেলে দিচ্ছিল ও ধুলো আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছিল,
24 তাই সহস্রপতি পলকে দুর্গের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার হুকুম দিলেন, এবং লোকেরা কোন্ দোষের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এতই চিৎকার করছে, তা জানবার জন্য কড়া বেত মেরে তাঁকে জেরা করতে নির্দেশ দিলেন।
25 কিন্তু তারা যখন তাঁকে কশা দিয়ে বাঁধল, তখন যে শতপতি কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন, পল তাঁকে বললেন, 'একজন রোমীয় নাগরিককে বিচার না করেই বেত মারা আপনাদের পক্ষে কি বিধেয়?
26 কথাটা শুনে শতপতি সহস্রপতিকে গিয়ে বললেন, 'আপনি কী করতে যাচ্ছেন? লোকটা তো রোমীয় নাগরিক!
27 তাই সহস্রপতি তাঁকে এসে বললেন, “আমাকে বল, তুমি কি রোমীয় নাগরিক?' তিনি বললেন, 'হ্যাঁ।'
28 সহস্রপতি প্রতিবাদ করে বললেন, 'এই নাগরিকত্ব আমি বহু অর্থের বিনিময়েই পেয়েছি।' পল বললেন, 'আমি জন্মসূত্রেই তা-ই।
29 তাই যাদের তাঁকে জেরা করার কথা ছিল, তারা তখনই পিছিয়ে গেল; সহস্রপতিও ভয় পেলেন, কেননা বুঝতে পারলেন যে পল ছিলেন রোমীয় নাগরিক, আর তিনি তাঁকে শেকল দিয়েই বেঁধে রেখেছিলেন।
30 পরদিন, ইহুদীরা কিজন্যই বা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে, তা সঠিকভাবে জানবার ইচ্ছায় সহস্রপতি তাঁর বাঁধন খুলে দিলেন, ও প্রধান যাজকদের ও গোটা মহাসভাকে সমবেত হবার জন্য আদেশ দিলেন ; পরে পলকে এনে তাঁদের সামনে দাঁড় করালেন।